ঘণ্টাখানেক ধরে রুবেলের ফোন বন্ধ
‘আমার ছেলে বাইচা আছে না কি মইরা গেছে কিচ্ছু জানি না। আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত চাই। য্যামনে পাড়েন আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত দ্যান’ এভাবেই ছেলেকে ফিরে পেতে আহাজারি করছিলেন ভবনে আটক রুবেলের মা কমলা বেগম।
রুবেল আগুন লাগা ভবনটির ১৪ তলায় একটি অফিসে পিয়নের কাজ করেন। আগুন লাগার পর তিনি আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন। তবে কথা বলার পর থেকে ঘণ্টাখানেক হলো তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মা কমলা বেগম জানেন না তার ছেলে আদৌ বেঁচে আছে কিনা। রুবেলের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। বাবার নাম হানিফ হাওলাদার। টিভিতে আগুন লাগার সংবাদ দেখে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন রুবেলের মা ও তার চাচা মো. আব্দুল্লাহ।
ভবনটির নিচ থেকে রুবেলের খোঁজ করছিলেন তারা। আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রুবেল সকাল ৯টায় সকালের নাস্তা করে নতুন বাজারের বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। এরপর দুপুরে তারা ভবনটিতে আগুন লাগার খবর পান। এরপরই তারা রুবেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। রুবেল ফোনে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু ঘণ্টাখানেক হলো তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানেন না রুবেল বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। ’
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফআর টাওয়ারের ৯ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করছে।
ভবনটিতে দ্যা ওয়েভ গ্রুপ, হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড ছাড়াও অর্ধশতাধিক অফিস রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী রায়ান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তিন-চারজন নিচে দাঁড়িয়ে নাস্তা করছিলাম। এ সময় ভবনটির ৯ কিংবা ১০ তলায় দাউ দাউ করে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে দেখি। অনেককে চিৎকার করে নিচে নেমে আসতে দেখা যায়। তখনই আমি ৯৯৯-এ ফোন দেই। পাশাপাশি আরও ২-৩ জন ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিয়েছে। ফোন দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট সেখানে উপস্থিত হয়। এর মধ্যে ল্যাডার ইউনিট (বহুতল ভবন থেকে উদ্ধারকারী সিঁড়ি) ও মোটরসাইকেল ইউনিট ছিল।’
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ভবনের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান করছেন। ভবনের অধিকাংশ লোকই নিচে নেমে অবস্থান নিয়েছে। ভেতরে অনেকে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বহুতল ভবনটির পাইপ বেয়ে অনেককে নিচে নামার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে।
এখন আগুনের শিখা কিছুটা কমে এসেছে। তবে বেড়েই চলছে ধোঁয়ার পরিমাণ। দমকল বাহিনীর সদস্যরা ভবনের ভেতরে অক্সিজেন দেয়ার চেষ্টা করছেন।
ভবনটির বিভিন্ন তলায় আটকা পড়া মানুষ ধোঁয়ার কবলে পড়ে বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন। জানালা দিয়ে হাত নেড়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন অনেকে।
তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। আটকা পড়াদের উপর থেকে লাফ দিতেও নানাভাবে নিষেধ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এর আগে বেশ কয়েকজন লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের কুর্মিটোলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জেইউ/এসআর/পিআর