পল্টন মোড়ে নেই জেব্রা ক্রসিং, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
গুরুত্বপূর্ণ চার রাস্তার মোড়। চারদিক থেকেই একের পর এক আসছে বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ বিভিন্ন গণপরিবহন। আশেপাশে নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ। পথচারী পারাপারে নেই কোনো জেব্রা ক্রসিংও। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্যদিন এসব গণপরিবহন পাশ কাটিয়ে রাস্তার এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পল্টন মোড়ের চিত্র এটি।
ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে গত বছরের ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পথচারী পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিংয়ে একপ্রকার ছেয়ে যায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত সড়কগুলো। তবে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য পিচঢালা পথে সাদা রঙের একাধিক লম্বা আঁচড়ে তৈরি এ জেব্রা ক্রসিংয়ের দেখা মেলেনি পল্টন মোড়ের কোনো রাস্তায়।
রোববার সরেজমিন পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এ মোড়টি দিয়ে প্রতি মিনিটে অন্তত ২০ জন পথচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার একদিক থেকে অন্যদিকে যাতায়াত করছেন। কেউ কেউ শিকারি পাখির মতো ওৎপেতে থাকেন, যেই একটু গাড়ির চাপ কম হয়, দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। আবার কেউ কেউ একের পর এক চলন্ত গাড়ি পাশ কাটিয়ে রাস্তা পার হন।
ব্যস্ত এ মোড়ে পথচারী পারাপারের জন্য কোনো ফুটওভার ব্রিজ অথবা জেব্রা ক্রসিং না থাকলেও পূর্বদিকে কয়েকশ গজ দূরে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের পাশেই রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ। এছাড়া দক্ষিণ দিকে কয়েকশ গজ দূরে অবস্থিত জিরো পয়েন্ট মোড়ে রয়েছে পথচারী পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং।
তবে পল্টন মোড় পার হওয়ার ওই দুটি স্থান (বায়তুল মোকাররম মার্কেটের পাশের ফুটওভার ব্রিজ এবং জিরো পয়েন্টের জেব্রা ক্রসিং) কোনো উপকারে আসে না। কারণ পল্টন থেকে জিরো পয়েন্ট হেঁটে ঘুরে আসতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। আর বায়তুল মোকাররম মার্কেটের পাশের ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে ঘুরে আসতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
এছাড়া উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ বা পূর্বদিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার না হয়ে ফুটওভার ব্রিজ অথবা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই হাজারও পথচারী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পল্টন মোড় পার হচ্ছেন।
রোববার দুপুরে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়া রোকেয়া নামের এক পথচারী বলেন, এখানে তো কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। এভাবে গাড়ির ভিড় ঠেলে রাস্তা পার হওয়া ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। যদি ফুটওভার ব্রিজ থাকতো তাহলে এভাবে রাস্তা পার হতাম না।
বাস, মাইক্রোবাসের ফাঁক গলে ঝুঁকি নিয়ে পশ্চিম দিক থেকে পল্টন মোড়ের পূর্ব দিকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভাই এভাবে ছাড়া তো রাস্তা পার হওয়ার উপায় নেই। এখানে কোনো জেব্রা ক্রসিং নেই। গাড়ি থামিয়ে ট্রাফিক পুলিশ পথচারী পার করেও দেয় না। একদিকের গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকের রাস্তা খুলে দেয়া হয়। ফলে সবাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এ মোড় পার হন।
পূর্বদিক থেকে মোড়ের পশ্চিম প্রান্তে আসা রুবেল বলেন, ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার না হলে জিরো পয়েন্ট মোড় ঘুরে আসতে হবে অথবা বায়তুল মোকাররম মার্কেটের পাশের ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় নষ্ট হবে। এত সময় নষ্ট করে ঘুরে আসলেও লাভ হবে না। কারণে তোপখানা রোডে যেতে আপনাকে কোনো না কোনো রাস্তা ঝুঁকি নিয়ে পার হতেই হবে।
এমএএস/বিএ/এমএআর/আরএস/জেআইএম