একটি ফুটওভার ব্রিজের ‘অপমৃত্যু’!
পুরান ঢাকার পলাশী মোড় থেকে বকশীবাজার অভিমুখে কিছুদূর এগোলেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে চোখে পড়বে সাজানো-গোছানো সুন্দর একটি ফুটওভার ব্রিজ। উত্তর-দক্ষিণমুখী ব্রিজটির চারপাশে সবুজের সমারোহ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে শক্ত স্টিলে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি কমলা রঙের। এ কারণে দূর থেকেই দৃষ্টিগোচর হয় সবার।
ফুটওভার ব্রিজটির ওপরে সারি সারি টবে লাগানো আছে বাহারি ফুলের গাছ। গাছগুলো দূর থেকে ব্রিজটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার, দুপুর ১২টা। সরেজমিন দেখা যায়, ওভারব্রিজটির সিঁড়ির গোড়ায় সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলুন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন।’ কিন্তু এ প্রতিবেদক দীর্ঘক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়েও কাউকে ব্রিজটি ব্যবহার করতে দেখেননি।
বুয়েটের শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যস্ত সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন। ব্রিজটির নিচে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স। সেটিও ভাঙাচোরা, দায়িত্ব পালনে কাউকে সেখানে দেখা গেল না।
বুয়েট ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের অদূরে ফুটওভার ব্রিজের পাশেই আড্ডা মারতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। ফুটওভার ব্রিজটিতে কেউ উঠছে না কেন- প্রশ্ন করতেই বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তারা! বলেন, ‘এটা তো ডেড। দেখছেন না, দুপাশে ওভারব্রিজে ওঠার সিঁড়িতে টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। সবাই শর্টকাটে রাস্তা পার হতে চান।’
‘সন্ধ্যার পর এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসতো। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফুটওভার ব্রিজটিতে ওঠার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।’ তবে ঠিক কত দিন আগে, সেটা তারা বলতে পারেননি।
পলাশী থেকে বকশীবাজারগামী সড়কটি কখনও বেশ ব্যস্ত, আবার কখনও ফাঁকা থাকে। দ্রুতগামী বাস, মিনিবাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল করে। যারা রাস্তা পার হন, এক হাত উঁচিয়ে তাদের সেটা করতে হয়। ফলে থেকে যায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতরে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল। এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে নাসরিন জাহান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছে ফুটওভার ব্রিজটি কখনও ব্যবহার করেছেন কিনা- জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ব্রিজটি দেখতে সুন্দর হলেও এটি ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি হয়নি। অনেকগুলো উঁচু লোহার সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে কষ্ট হতো। তার চেয়ে একটু সাবধানতা অবলম্বন করে খুবই কম সময়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়া যায়।
বছর খানেক ধরে ফুটওভার ব্রিজে ওঠার পথ বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শহরের অনেক স্থানে ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্রিজটি ফেলে না রেখে বরং অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে মানুষের উপকারে আসতো।
এমইউ/এমএআর/আরএস/জেআইএম