পেশা ছাড়ছে বেদে সম্প্রদায়
দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে ভিন্ন কাজে যুক্ত হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়। জীবনের তাগিদে ধীরে ধীরে যাযাবর জীবন থেকে বেরিয়ে এসে তারা স্বাভাবিক ও স্থায়ী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে। সমাজের মূল স্রোতে মিশছে তাদের সন্তানরাও। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক চাহিদাও এখন তারা পূরণ করতে পারছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেদেদের জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে আসছে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ও বহুবিবাহ হ্রাস পাচ্ছে এবং মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে রূপান্তর হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বেদে পল্লীর নারীরা এখন নকশিকাঁথা সেলাই করে আর পুরুষরা জুতার কারখানাসহ অন্যান্য কাজে যুক্ত হচ্ছে। পেশা পরিবর্তনের ফলে তাদের আয় বাড়ার পাশাপাশি জীবনমানেরর উন্নয়ন হয়েছে। তাদের সন্তানরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, একটি অংশ উচ্চশিক্ষিতও হচ্ছে। অবশ্য এখনও এই সম্প্রদায়ের লোকজন চাকরি কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রম মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এসব কারণে বেদে সম্প্রদায় নিজেদের পরিচয় দিতে চান না। তাই জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে কিংবা ডাক্তার, প্রকৌশলী ও শিক্ষকতা পেশায় যাওয়া বেদে সম্প্রদায়ের অগ্রসরমান শ্রেণি এখন আর নিজদের অতীত পরিচয় দিতে চাইছেন না।
ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ও মাস্টার্স পর্যায়ের ৫০ শিক্ষার্থী তাদের গবেষণা কর্মের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বেদে পল্লী পরিদর্শন করেন। এতে টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী।
তিনি বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে জীবনমান উন্নয়নের জন্য বেদে পল্লীতে বসবাসরত মানুষের মানবিক মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে সেখানে কার্যক্রম বেসরকারি অথচ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে বাড়ানো দরকার। দ্রুত সমৃদ্ধি কার্যক্রম পিকেএসএফ চালু করে সরকারের যে সদিচ্ছা, যাতে আয় প্রবাহ বৃদ্ধি পায় সেজন্য ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরির জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অর্থায়ন দরকার। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীরা বেদে সম্প্রদায়ের অতীত ও বর্তমান জীবনাচরণের পরিবর্তনের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন।
এমবিআর/এমকেএইচ