নৌকা বাইচে মাতলো হাতিরঝিল
বাংলা লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান নৌকা বাইচ। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রাজধানীর হাতিরঝিলে হারিয়ে যেতে বসা নৌকা বাইচকে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ রোইং ফাউন্ডেশন।
লোকজ সংস্কৃতির এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখার রোইং ফেডারেশনের যে প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এ দিন হাতিরঝিলে জড়ো হয় হাজারো দর্শক। ছুটির দিন হওয়ায় মহানগর প্রজেক্ট ব্রিজ থেকে এফডিসি ওয়াটার ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত হাতিরঝিলের দুই পাশ দর্শককে কানায় কানায় ভরে যায়।
পৌনে ৪টায় শুরু হওয়া নৌকা বাইচ উদ্বোধনের পরেই দর্শকদের করতালি আর সাইড ড্রামের বাজনায় মেতে উঠে পুরো হাতিরঝিল।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আপাদমস্তক বাঙালি। তার নিজের কর্মকাণ্ডে আচার-অনুষ্ঠানে পোশাক পরিচ্ছদে তিনি বাঙালিত্বকে রক্ষা করে চলেছেন আমৃত্যু। তিনি বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস, কৃষ্টি ঐতিহ্যকে লালন ও ধারণ করার পক্ষে ছিলেন। যে কারণে তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে কখনো তাল মেলাননি।
তিনি বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে নৌকা বাইচ অন্যতম। এই নৌকা বাইচ আনন্দ দিতো লাখ কোটি বাঙালিকে। নৌকা বাইচের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য। এটা প্রায় বিলুপ্ত হবার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন তরুণ প্রজন্মকে প্রশিক্ষিত করে দেশে ও দেশের বাইরে পাঠিয়ে ঐহিত্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান বাঙালির বাঙালিত্ব টিকে থাকুক। বাঙালি বাংলিশ না হোক। বাঙালির রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। ঐতিহ্যের খেলাধুলা যেন বিলুপ্ত করা না হয়। কবি গান, ভাটিয়ালি, জারি সারি গান, পুতুল নাচ, সার্কাসসহ সব পর্বকে আমরা আবার উজ্জীবিত করব। নৌকা বাইচের পরিসর আরও বাড়বে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত।
এই হাতিরঝিলে নিয়মিত যাতে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতা হয় সেজন্য রোইং ফেডারেশনের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন স্পট তৈরি করে দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় পুরুষদের ১১টি ক্লাব। ক্লাবগুলো হলো, আলীনগর রোইং ক্লাব, শাহীনবাগ রোইং ক্লাব, সৃজনী রোইং ক্লাব, নিউ ইয়ং স্টার রোইং ক্লাব, নিউ গাজী রোইং ক্লাব, মোহনপুর রোইং ক্লাব, বরিশাল রোইং ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ রোইং ক্লাব, উত্তরখান রোইং ক্লাব, ইউনিভার্সেল রোইং ক্লাব ও সিলেট নৌকা সমিতি।
এরমধ্যে প্রতিযোগিতায় আলীনগর রোইং ক্লাব প্রথম, নিউ গাজী রোইং ক্লাব দ্বিতীয় এবং সিলেট নৌকা সমিতি তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
অন্যদিকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া চার নারী ক্লাবের মধ্যে প্রথম হয় টঙ্গী রোইং ক্লাব, দ্বিতীয় চুনকুটিয়া রোইং ক্লাব, তৃতীয় ইউনিভার্সেল রোইং ক্লাব এবং চতুর্থ হয় নিউ ইয়ং স্টার রোইং ক্লাব।
জেইউ/জেএইচ/পিআর