ভিড় বেড়েছে স্বাধীনতা জাদুঘরে
স্বাধীনতা দিবসে দেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস জানতে ভিড় বেড়েছে স্বাধীনতা জাদুঘরে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ জাদুঘরে মানুষের আনাগোনা থাকলেও দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘরের দুয়ার খোলে বেলা ১১টায়। কারণ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল জাদুঘরে।
জাদুঘরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আনাগোনায় মুখর জাদুঘরের কক্ষগুলো।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে জাদুঘরে এসেছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি জাদুঘরের কক্ষের আলো আঁধারিতে মেয়েকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার ছবি দেখাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ছুটির দিন। আমার অফিস বন্ধ, মেয়েরও স্কুল বন্ধ। তাই স্বাধীনতা জাদুঘর দেখাতে নিয়ে আসলাম। এতে তার জানাটা দ্রুত হবে।
জাদুঘরের তিনটি কক্ষেই দর্শনার্থীদের অনেককেই মোবাইল ফোনে সেলফিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
জাদুঘরের নিরাপত্তা প্রহরী মো. বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, জাদুঘরে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ দর্শনার্থী আসে। তবে শুক্রবার সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী হয়। আজকে দর্শনার্থীদের চাপ রয়েছে, দর্শনার্থীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছি।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজকে ছাত্র, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের প্রবেশ ফ্রি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাধীনতা জাদুঘর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ফি ২০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের প্রবেশ ফি ৩০০ এবং অন্য দেশের নাগরিকদের প্রবেশ ফি ৫০০ টাকা।
জাদুঘরের কমকর্তা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ক-বিভাগে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ইচ্ছেমতো ছবি এঁকেছে। খ-বিভাগে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ধ্বংসলীলা নিয়ে ছবি এঁকেছে। গ-বিভাগে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ বিষয়ক এবং ঘ-বিভাগে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি এঁকেছে।
স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য স্বাধীনতা জাদুঘর। প্লাজা চত্বরে টেরাকোটা ম্যুরালের নিচের অংশে এ জাদুঘরের অবস্থান। ওপর থেকে নিচে প্রসারিত হয়েছে জাদুঘরের প্রবেশ পথ। রঙিন কাঁচের ভেতর থেকে হালকা সবুজ আলোর পথ ধরে জাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়। পুরো জায়গাজুড়েই স্থানে স্থানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের ছবি। জাদুঘরের মাঝখানে রয়েছে একটি ফোয়ারা। এটি নেমে এসেছে মাটির উপরিভাগ থেকে।
মূলত স্বাধীনতা জাদুঘরের তিনটি অংশ। প্রথম অংশে বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বাংলার উৎপত্তি ও স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন সময়কার আন্দোলন। এটি শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি দিয়ে।
দ্বিতীয় অংশটি একটি অন্ধকার কুঠুরি। সেখানে একাত্তরের ভয়াবহ দিনগুলোর ছবি- নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি। এর বাঁ দিকেই আছে ফোয়ারার জায়গাটি। যেটি স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো শহীদের মায়ের অশ্রুকেই নির্দেশ করে।
তৃতীয় অংশটি লড়াই-সংগ্রাম ও বিজয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অপারেশন, আন্তর্জাতিক সাড়া দেয়ার বিষয়গুলো রয়েছে। এটি শেষ হয়েছে বাঙালির বিজয় অর্জনের ছবির মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা জাদুঘরে প্রবেশের আগে যে স্থানটি স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমীদের নজর কাড়বে তা হলো টেরাকোটা ম্যুরাল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ টেরাকোটা ম্যুরালের মাধ্যমে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্লাজা চত্বরের পূর্ব পাশের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে এ ম্যুরাল।
আরএমএম/এএইচ/পিআর