সময় বাঁচাতেই ফুটওভার ব্রিজে উঠি না
>> জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হওয়া সহজ, ফুটওভার ব্রিজে ওঠা কষ্টকর
চাকরিজীবী, শ্রমিক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন রাস্তা। ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা। ফলে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। অকালে ঝরে যাচ্ছে প্রাণ।
রাজধানীর নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রবেশ পথের উত্তর পাশে রয়েছে একটি রাস্তা পারাপারের ফুটওভার ব্রিজ। রোববার দুপুর ১২টায় সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে কিন্তু পথচারীশূন্য। ব্রিজের দুই পাশে ২০ গজ দূরত্বে রয়েছে দুটি জেব্রা ক্রসিং।
এখানে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা পার হতে দেখা যায়। যার অধিকাংশই অভিভাবক ও স্কুলশিক্ষার্থী। সচেতনতার অভাব আর সময় বাঁচাতেই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না- এমন মন্তব্য তাদের। দুই পাশে জেব্রা ক্রসিং থাকায় কষ্ট করে ব্রিজে কে উঠতে যাবে- এমন প্রশ্নও ছোড়েন কেউ কেউ।
নটর ডেম কলেজের গেট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছেন এক অভিভাবক। সঙ্গে রয়েছে স্কুলপড়ুয়া এক শিশু। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সময় নেই, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে। তাই দ্রুত রাস্তা পার হচ্ছি।’ যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কী হবে? জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে নীরবে চলে যান তিনি।
মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন এক চাকরিজীবী বাবা। তিনিও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা উচিত ছিল। বাচ্চাকে নিয়ে দেরি হয়ে গেছে, তাই সময় বাঁচাতে রাস্তার মাঝামাঝি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হয়েছি। জেব্রা ক্রসিং না থাকলে ব্রিজ ব্যবহার করতাম।’
‘সরকার সুযোগ করে দিয়েছে, আমরাও সুযোগ নিচ্ছি। তবে ভুল হয়েছে, আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।’
পাশেই মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখানকার শিক্ষার্থী আফজাল। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার কর কিনা? উত্তরে সে জানায়, ব্যবহার করি না। কারণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং আছে। এখান দিয়ে পার হওয়া সহজ। ফুটওভার ব্রিজে ওঠা অনেক কষ্টকর। দ্রুত রাস্তা পার হওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করি। জেব্রা ক্রসিং না থাকলে ব্রিজে উঠতাম।
তবে এর মধ্যেও কয়েকজনকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে দেখা যায়। এমনই একজন বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম সিকদার। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমার হাতে সময় আছে, তাড়াহুড়া করে যাওয়ার দরকার নাই। এজন্য ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছি। সবারই এটি ব্যবহার করা দরকার। কারণ সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’
শিক্ষার্থী মাশরাফি বলেন, ‘ব্রিজে পার হওয়া নিরাপদ; তাই কষ্ট হলেও এখান দিয়ে পার হচ্ছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় তিন স্কুল শিক্ষার্থীকে। কিন্তু দ্রুতগতিতে গাড়ি যাওয়ায় বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তারা। অবশেষে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হয় তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই তিন শিক্ষার্থী বলে, ‘ওখানে জেব্রা ক্রসিং ছিল, তাই রাস্তা পার হতে চেয়েছি। কারণ জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়া যায়। কিন্তু গাড়ির কারণে রাস্তা পার হতে পারিনি। তাই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হলাম।’
জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে গাড়ির গতি কমাতে হয়। এ নিয়মও কোনো চালককে মানতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে শতাব্দী পরিবহনের চালক কবির বলেন, ‘জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে গাড়ির গতি কমাতে হয় জানি। কিন্তু সিরিয়াল দেয়ার জন্য দ্রুত গাড়ি ঘোরাতে হবে, এ কারণেই …।’
এসআই/বিএ/এমএআর/জেআইএম