আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি
বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার জেরে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। এক গ্রুপ আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও আরেক গ্রুপ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ করে বসুন্ধরার সামনে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করে আজ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বসুন্ধরার সামনে ফিরে আসে। এরপর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলে একদল শিক্ষার্থী ‘মানি না মানব না’ বলে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। শান্ত থেকে সিদ্ধান্তগুলো শোনার আহ্বান জানানো হয়।
এরপর শিক্ষার্থীরা শান্ত হলে আন্দোলনের মুখপাত্র বিইউপির আইন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহিদুজ্জামান বলেন, মেয়র সাহেব আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে সিনিয়র পর্যায়ের যাদের সামনে পাওয়া গেছে তাদের নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি তিনভাবে মেনে নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম দাবিটি ছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবরার হত্যাকারীদের ফাঁসি। হত্যাকারী গাড়িচালক পুলিশের কাছে সাতদিনের রিমান্ডে। রিমান্ড শেষ হলে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে চার্জশিট প্রদান করা হবে বলে আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।’
দ্বিতীয় দাবির বিষয়ে বলেন, সু-প্রভাত ও জাবালে নূর পরিবহনের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানাই। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র সাহেব (মেয়র আতিকুল ইসলাম) বলেছেন, ‘এই দুই পরিবহনের যতগুলো ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে সেগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে। এছাড়া বাকি গাড়িগুলোর নতুনভাবে কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তৃতীয় ধাপের বিষয় তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘আগামী সাতদিনের মধ্যে ঢাকার যতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকা রয়েছে সেগুলোর সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালে তিনি মেনে নেন। মেয়র সাহেব আশ্বস্ত করেছেন আগামী সাতদিনের মধ্যে কোথায় কোথায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন তা কর্মপরিকল্পনা করা হবে। ৩০ দিনের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘যেহেতু আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নেয়া হয়েছে তাই আমরা আগামী সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আগামী ২৯ মার্চ বেলা ১১টায় আবারও মেয়রের সঙ্গে বৈঠক হবে। যদি তার (দাবির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি) ব্যত্যয় হয় তাহলে ফের আন্দোলন হবে।’
আন্দোলনের মুখপাত্রের এ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা ‘মানি না, মানব না’ বলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা সেই অনুরোধ না মেনে আগামীকাল আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘আমরা বাড়ি ফিরে গেলে সব আশ্বাসের মধ্যেই থাকবে, তার বাস্তবায়ন হবে না।’ এই বলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর পুলিশ এসে তাদের চলে যাওয়ার আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ চলে গেলেও একটু পাশে সমবেত হয়ে পরবর্তী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে দেখা গেছে তাদের। এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘এভাবে আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। আন্দোলন যেহেতু ঘোষণা করা হয়েছে তাই বাধ্য হয়ে তা মানতে হবে।’
তবে সাতদিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ফের আন্দোলন শুরু হবে- এমন ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যান। তারা সড়ক থেকে চলে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।
এমএইচএম/এসআর/এমএস