ভারতের পর অন্য দেশেও যাত্রীবাহী জাহাজ চালু করতে চায় সরকার
ভারতের কলকাতার পর আসামসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অন্যান্য অঞ্চলেও যাত্রীবাহী জাহাজ চালু করতে চায় সরকার।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ কথা জানান।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আগামী ২৯ মার্চ বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় জাহাজ চলাচল শুরু হবে। এটা সফল হবে কি না- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সবসময় ইকোনমির দিকে তাকালে তো হবে না। কিছুটা রিলেশনের দিকেও তাকাতে হবে। ৭০ বছর পর আমরা এ ধরনের একটা সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি। এটা আমরা চালু করি, তারপর কোন পর্যায়ে নিতে পারব, চিন্তা-ভাবনা করব।’
‘২৯ তারিখে চালুর পর আমরা দেখব এটা কমার্শিয়ালি কতটা ভায়াবল, না হলেও আমাদের এই যাত্রীসেবাটা অব্যাহত রাখার চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে’,- বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ।
অন্যান্য স্থানেও এভাবে জাহাজ চালু করা হবে কি না- এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আসামে যেতে পারি। আমরা অন্যান্য দিকেও যাব। কিছুদিন আগে প্রাইভেট একটা কোম্পানি ঘুরে গেছে। আমরা শুধু আঞ্চলিক নয়, এই অঞ্চলের বাইরে যাওয়ারও আগ্রহ আমাদের আছে। আমাদের সক্ষমতা যতবেশি বাড়বে, আমাদের বিস্তৃতি তত বেশি বাড়বে।’
নদীর সীমানা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় পর্যায় চলছে, এটা ঢাকার আশপাশের এলাকায়। চট্টগ্রামেও আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমাদের যে লক্ষ্য- তা হলো আমরা নদী দখলমুক্ত করব। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহরের নদীগুলো মানুষের বসবাস ও চালাচলের উপযোগী করতে চাই। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা কাজ করছি। অল্প দিনেই আপনারা এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন।’
উচ্ছেদের পর নদী আবার পুনর্দখল হয়ে যায়- এ বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রমে কী মনে হচ্ছে, আমরা সফল হব, না ব্যর্থ হব। আপনারা যদি মনে করেন আমরা সফল হব, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব। এ কার্যক্রম টেকসই হবে। কারণ, একটা মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। মাস্টারপ্ল্যান যদি আমরা চূড়ান্ত করতে পারি তবে শুধু দখলমুক্ত নয়; বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে চাই। নদীর পাড়ে গিয়ে যেন আপনি থেকে যেতে চান, এমন একটা পরিবেশ আমরা তৈরি করব।’
টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর নদীর সীমানা থেকে ধর্মীয় স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দিতে চাই না। আমরা এ বিষয়ে মুফতি-মাওলানাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে দক্ষিণের (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন) মেয়র সাঈদ খোকনকে দায়িত্ব দেয়া আছে, তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জড়িতদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। আমরা সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। এমন কোনো কিছু করব না, যাতে নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে গিয়ে আবার সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। তবে নদীর তীর আমরা দখলমুক্ত করবই, আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
‘সরকারের ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সরকার গঠন করেন সেই সরকারের চ্যালেঞ্জ ছিল বিদ্যুৎ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। এবারের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নদী। আমরা ১০ হাজার কিলোমিটার নদীপথ তৈরি করতে চাই, নদীকে দখলমুক্ত করতে চাই। ঢাকা ও চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব করতে চাই,’- বলেন তিনি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে যেহেতু তাদের সঙ্গে একটা কার্যক্রম আছে, এগুলোর বিষয়ে তিনি (রাষ্ট্রদূত) জানতে চেয়েছেন। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয় আমরা মোংলা, মাতারবাড়ি ও পায়রাবন্দর নিয়ে যে কাজগুলো করছি, ভবিষ্যতে কী করতে চাই- সে বিষয়ে তাকে অবহিত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নৌখাতে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাদের অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি, বিনিয়োগ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
সাক্ষাতের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি রাষ্ট্রদূতকে উপহার দেন খালিদ মাহমুদ।
আরএমএম/জেডএ/জেআইএম