যুগান্তকারী পদক্ষেপ : ঢাকায় হবে হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন!
হজ ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবের বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করার পরিবর্তে ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
গত বছর (২০১৮) পর্যন্ত পবিত্র হজ পালনে জেদ্দা বিমানবন্দরে নেমে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বিমান ভ্রমণে ক্লান্ত হজযাত্রীরা ইমিগ্রেশনের জন্যও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তবে হজ মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপ কার্যকর হলে অপেক্ষার ভোগান্তি আর থাকবে না।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে সম্প্রতি বাংলাদেশি একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে দেশটি সফরকালে সৌদি ইমিগ্রেশনের পরিবর্তে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ওই অনুরোধে সাড়া দিচ্ছে সৌদি সরকার। সৌদি আরবের পরিবর্তে ঢাকায় ইমিগ্রেশন করা যায় কি না -তা খতিয়ে দেখতে সৌদি সরকার পাঁচ সদস্যের একটি কারিগরি দল আগামী বুধবার (২০ মার্চ) ঢাকায় পাঠাচ্ছে। সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন। দলের সদস্যরা মূলত সৌদি বিমানবন্দরে পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ।
২১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) তারা পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিমানবন্দর ও হজ অফিস পরিদর্শন করবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশের মিশন সম্পন্ন করা কারিগরি পরীক্ষা করে দেখবেন।
সভা শেষে সেদিনই তারা দেশে ফিরে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। এছাড়া ২১ মার্চে সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের আগে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে ৩টায় ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি প্রাক প্রস্তুতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এ মুহূর্তে সচিব সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার দেশে ফিরেই তিনি সভায় যোগদান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আগামী ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
চলতি বছর থেকেই সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের বদলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, এ ব্যবস্থা চালু হলে ঢাকায় বিমানবন্দরে হজ ক্যাম্পে ডিপার্চার ইমিগ্রেশনের সাথেই সৌদির কর্মকর্তা আগাম সৌদি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন। সৌদি আরবে হজযাত্রীরা বিমান থেকে নেমে সরাসরি হজ টার্মিনালে প্রবেশ করতে পারবেন।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার হজ পবিত্র হজ পালন করবেন। দেশেই ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে বিপুলসংখ্যক হজযাত্রীকে আর সৌদি আরবের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে মালয়েশিয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়া হজযাত্রীদের আগাম ইমিগ্রেশনের সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ হবে এমন সুবিধাপ্রাপ্ত তৃতীয় দেশ।
প্রতি বছর হজ মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ লাখ মানুষ বিমানে সৌদি আরব গমন করে। এ সময় একের পর এক বিমান আসতে থাকায় ইমিগ্রেশনে জট লেগে যায়। ইমিগ্রেশনের জন্য হজযাত্রীদের সর্বনিম্ন ২ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
হজযাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে সৌদি সরকার ইতোমধ্যে পুরো হজ ব্যবস্থাপনাকে অনলাইন ভিত্তিক করেছে। হজের নিবন্ধন, ভিসা ও বাড়িভাড়া অর্থের লেনদেনও বর্তমানে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে।
এমইউ/আরএস/এমএস/জেআইএম