মরদেহ আছে দুটো অথচ নিখোঁজ ৬
দু'জন বাদে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুনে ঘটনাস্থলে নিহত সবার পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডি। অথচ এখনও নিখোঁজের তালিকায় রয়েছে ছয়জনের নাম। গতকাল মঙ্গলবার সিআইডির দ্বিতীয় ধাপে মরদেহের পরিচয় প্রকাশের পরপরই প্রশ্ন ওঠে কোথায় তারা?
চকবাজার ট্র্যাজেডিতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ৬ জন এখনও নিখোঁজ।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিলা জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনার পর আমরা নিখোঁজ ৭৬ জনের তালিকা তৈরি করেছিলাম। এর মধ্যে অনেকের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে, অনেককে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ আছে সেই তালিকাটি এখনও আপডেট করা হয়নি। আমরা ম্যানুয়ালি প্রতিটি পরিবারকে ফোন দিয়ে নিখোঁজদের বিষয়ে তথ্য জানতে চাচ্ছি।
তবে জাগো নিউজের কাছে থাকা তালিকা অনুযায়ী বিবি হালিমা, আত তাহী, রাজু, মোস্তফা মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও ফারুক হোসেন এখনও নিখোঁজ।
সিআইডি বলছে, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ৬৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। চোখে দেখে স্বজনরা মরদেহ নিয়েছেন ৪৮টি। সিআইডির কাছে ২০টি ব্যাগে আসে ১৮টি মরদেহের ডিএনএ নমুনা। এর মধ্যে ১৬টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন তারা।
এ বিষয়ে সিআইডি’র অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন বলেন, সিআইডি মোট ২৩টি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করে। এর মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। দুইটি মরদেহ ৩টি পরিবারের সঙ্গে কোনো মরদেহের ডিএনএ মেলেনি। মরদেহগুলো বর্তমানে মর্গেই আছে। কেউ মরদেহগুলোর দাবি করলে তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে মেলানো হবে বলে জানান তিনি।
মরদেহ আছে দুটা অথচ নিখোঁজ ৬ জন- বাকিরা কোথায় থাকতে পারে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত মরদেহের মুখ চেনা যায় না। এ ঘটনায়ও নিহতদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তবে ২-৩ দিন আপনজনের মরদেহ না পেয়ে স্বজনরাও অস্থির হতে থাকে। এ কারণে অনেকেই মরদেহের সঙ্গে কিছু মিল পেলেই তা নিজের বলে দাবি করেন। যারা ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই মরদেহ নিয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি অঙ্গার ছিল। হাত-পা’র আকৃতি ও অন্যান্য চিহ্ন দেখে স্বজনরা নিজেদের মনে করে মরদেহ নিয়ে গেছে, এমনটিও হতে পারে। হতে পারে যেই ৩টি পরিবারের ডিএনএ টেস্ট কারও সঙ্গে মেলেনি তাদের মরদেহ আগেই কেউ নিজের দাবি করে দাফন করে ফেলেছে। আবার এমনও হতে পারে হতে যে নিখোঁজ ৬ জন অন্য কোন কারণে নিখোঁজ হয়েছে। তারা এ ঘটনার দিন সেখানে ছিল না। দুইটিই হতে পারে।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ঢামেকে ৬ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজুর জন্য ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন তার মা ফাতেমা বেগম। হেলাল উদ্দিনের জন্য তার বাবা কামাল হোসেন, সেটিও মেলেনি।
গত ৫ মার্চ নাসরিন জাহান ও সালেহ আহমেদ লিপুর মরদেহ শনাক্ত হলেও সন্তান আত তাহীর মরদেহ শনাক্ত হয়নি। পরিবারের ধারণা ছিল বাকী মরদেহগুলোর মধ্যে হয়তো আত তাহীর মরদেহ শনাক্ত হবে। কিন্তু সিআইডি সবশেষ বলেছে, আত তাহী নামে কোনো মরদেহ শনাক্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুরাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিআইডির কাছ থেকে এ পর্যন্ত আমরা ১৬টি মরদেহের পরিচয় পেয়েছি। বাকি দুইটির পরিচয় পেলে সেগুলোও হস্তান্তর করা হবে।’
এআর/জেএইচ/এমএস