ক্রসফায়ারের নামে কোনো বাহিনী কাউকে হত্যা করছে না
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সুশীল সমাজের অনেকেই সমালোচনা করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাকি নিরাপরাধীদের ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করছে। আমি স্পষ্ট করে বলছি, ক্রসফায়ারের নামে কোনো বাহিনী কাউকে হত্যা করছে না। মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে যখন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে গুলি ছোড়া হচ্ছে তখনই আত্মরক্ষার্থে গুলি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে নয়।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও বিজি প্রেস মাঠে আয়োজিত মাদকবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যখন পুরো বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছিল তখন আমরা বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ভয়ঙ্কর জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। যারা (জঙ্গিরা) বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানোর পাঁয়তারা করছিল। আবার জঙ্গিবাদের মতোই মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
'যারা ইয়াবা সেবন করেন তাদের মেধা বিলুপ্ত হয়। ৩/৪ বছর ইয়াবা হেরোইন সেবন করলে নিজের নামটাও ভুলে যাবার দশা হয়। একটা মানুষ যদি ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকেন তাহলে তিনি কতোটা সুস্থ থাকবেন?'
মন্ত্রী বলেন, আমরা কঠিন সাজার ব্যবস্থা করে নতুন আইন করেছি। এই আইনের কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। অথচ আছে ৯৫ হাজার কয়েদি। এই কয়েদিদের অধিকাংশই মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার। কঠোরতার কারণেই আজ মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারীদের জায়গা কারাগারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বিজিবিকে নির্দেশনা দিয়েছি কোনোভাবে সীমান্ত দিয়ে যেন মাদক না ঢোকে। কোস্টগার্ডকে বলেছি উপকূলে নজরদারি রাখতে। এরপরেও মাদক আসছে। আমরা মাদক তৈরি করি না তবুও মাদক আসছে। মাদক আমাদের যে কী ক্ষতি করছি তা ঘরে ঘরে জানাতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ইয়াং গ্রুপ সীসা বারে যায়। হুক্কা টানে। আগুনে ইয়াবা গুড়া করে টানছে। সেজন্য আমরা সীসাবারও নিয়ন্ত্রণে এনেছি।
বিদেশে দেখেন যেখানেই মাদকের ব্যবসা সেখানে কী পরিমাণ অস্ত্রের ব্যবসাও হচ্ছে। আমরা বলেছি, আইনি সহযোগিতা করবো, সারেন্ডার করেন, মুচলেকা দেন।
মন্ত্রী বলেন, অভিযানে মাদক কারবারীদের ধরতে গেলেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করছে। আত্মরক্ষার অধিকার তো আমাদের বাহিনীরও আছে। যারাই সারেন্ডার করবেন, মাদকের ব্যবসা করবেন ছাড়বেন, তাদের শেষ সুযোগটা দেয়া হবে। নইলে জেলে যেতে হবে। আর অস্ত্রের ঝনঝনানি যদি দেখাতে চান তাহলে কী পরিণতি হতে পারে তা আপনারাই জানেন।
তোমরা ছাত্র যুবকরা মাদককে না বলবে, মাদক বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দেবে। আমরা তালিকা করেছি, কাউকে ছাড়বো না। ব্যবসা না ছাড়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।
মাদকের ব্যাপারে যারা তথ্য দিচ্ছেন, তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। বাবা মা যেমন জঙ্গি সন্তানকে ধরিয়ে দিয়েছিল তেমনি মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে আসুন। আসুন আমরা ঘুরে দাঁড়াই মাদকের বিরুদ্ধে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ই কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, যুব সমাজ ছাত্র সমাজ দৃঢ় প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আজ যুব সমাজের বড় অংশ মাদকাসক্ত। তাদের জন্য আমরা কী করতে পেরেছি? আমাদের সন্তানরা যেন মাদকাসক্ত না হয়, মাদক নেয় কিনা খোঁজ রাখা, খেয়াল রাখা দরকার।
কোনো ধর্ম নেই- যে বলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত হও। মাদক নেয়াও ধর্মীয় অনুশাসন বিরোধী। ধর্মীয় অনুশাসন যদি লালন করি, তাহলে মাদককে শুধু স্লোগানে না বলা নয়, সমূলে নির্মূল করা যাবে।
রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করি দেশের জন্য, মানুষের জন্য। মাদকবিরোধী অবস্থান নিয়েও আমাদের সকল রাজনীতিবিদের কাজ করতে হবে। মাদকমুক্ত নের্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীমুক্ত নের্তৃত্ব যদি প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তা অনেকটা সফল হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়। শুধু বয়ান দিলেই হবে না, ঈমামের দায়িত্ব অনেক। ধর্মের অনুশাসন শুধু প্রচার নয়, মাদকের মতো ধর্মীয় অনুশাসন বিরোধী কাজগুলোও বন্ধ করতে নির্দেশনা ও চেষ্টা চালাতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আর ঠুঁটো জগন্নাত নয়। জনবল দ্বিগুণ করেছে, ৩২২২ জন জনবল করা হয়েছে।
আগে কখনো পায়ে হেঁটেও মাদকবিরোধী অভিযানে যেতো কর্মকর্তারা। এখন প্রত্যেক জেলায় কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি দেয়া হয়েছে। যে কারণে কাজে গতি ফিরেছে।
মাদকবিরোধী সমাবেশ করা হচ্ছে জেলায় জেলায়। মাদকবিরোধী মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। মাদকাসক্তির সংখ্যা যাই হোক না কেন, বাড়তে দেয়া যাবে না, এটা বন্ধ করতে হবে, মাদকের অস্তিত্ব বাংলাদেশে থাকতে দেয়া হবে না। এজন্য ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে, প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মোসাদ্দেক মো. আবুল কালাম, কাউন্সিলর মুন্সি কামরুজ্জামান কাজল, মনোচিকিৎসক মোহিত কামাল, মানসের অধ্যাপক অরুপ রতন চৌধুরী।
জেইউ/এসএইচএস/এমএস