নারীদের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হবে : শিক্ষামন্ত্রী
বাংলাদেশের নারীরা সবক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘নারীদের এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হবে।’
রাজধানীর শিশু একাডেমিতে শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত ‘ব্যাংকার-এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ ও পণ্য প্রদর্শনী মেলা-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা আজকে সর্বোচ্চ আদালতে আছেন, সশস্ত্র বাহিনীতে আছেন, ট্রেনচালক আছেন, ডিসি আছেন, এসপি আছেন, ইউএনও আছেন, ওসি আছেন। কোথায় নেই বলেন?’
‘মেজর জেনারেল আছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আছেন, রাষ্ট্রদূত আছেন, সচিব আছেন, সব ক্ষেত্রে আজকে নারীরা আছেন। আমরা যে এগিয়েছি সেটা খুবই দৃশ্যমান। আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে’ বলেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘আজকে সংসদে শতকরা ২০ ভাগের বেশি নারী। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ আছে যেখানে ২০ ভাগ নেই। আমাদের যারা প্রায় অনেক রকমের ছবক দেয়ার চেষ্টা করেন, তেমন অনেক দেশেও সংসদে ২০ ভাগ নারী নেই। আমাদের আছে এবং আমাদের স্থানীয় সরকারে শতকরা ৩০ ভাগের বেশি আছে।’
নারী উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তারা (নারী উদ্যোক্তা) তো মাস শেষে বেতন পাওয়ার চাকরি করছেন না। তারা নিজেরা উদ্যোক্তা এবং আরও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করছেন।’
‘আমি যাকেই প্রশ্ন করলাম, আপনি কতজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন? যিনি সর্বনিম্ন, তিনিও বললেন ২২ জন। আর সর্বোচ্চ ৩০০ জন। তাহলে এটা তো একটি বিশাল বড় কাজ’বলেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘অনেকে আছেন তৈরি পোশাকের কাজ করছেন। কেউ এমব্রয়ডারি আবার কেউ হস্তশিল্পের কাজ করছেন। কৃষি পণ্য উৎপাদন করছেন, বিপনন করছেন। ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন করা উদ্যোক্তাও আছেন। এমন অনেক ক্ষেত্রেও আছেন যেগুলা আমরা চিন্তাই করি না।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও চাকরির চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। শুধু চাকরি করার কথা কেন ভাববেন? তিনি তো ভাবতে পারেন নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন এবং আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন।’
‘আমাদের বোনেরা পারছেন। আমাদের অনেক ভাই আছেন যারা যুব উন্নয়ন থেকে খুব ছোট ঋণ নিয়ে ৫-৭ বছর পর ৫০-৬০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কাজেই আমাদের মনের চিন্তাগুলোকে পরিবর্তন করতে হবে’ যোগ করেন দীপু মনি।
নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা দুটি জায়গা থেকে হয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটি কন্যা শিশুকে আমরা সবকিছুতে না বলি। তুমি জোরে হেসো না, তুমি মেয়ে। তুমি জোরে দৌড়াবে না, তুমি মেয়ে। তুমি জোরে কথা বলবে না, তুমি মেয়ে। এ চিন্তাগুলো একটি মেয়ের মনের চারপাশে একটি শক্ত দেয়াল তৈরি করে দেয়। সেটা ভেঙে বের হওয়া তার সব থেকে বড় যুদ্ধ। যে মেয়ে একবার সেই দেয়াল ভাঙতে পারে, তাকে ঠেকাবার সাধ্য কারও নেই।’
তিনি বলেন, ‘নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি। এ বিষয়গুলোর শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা হয়। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির কারণে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে নানা বাধার সৃষ্টি হয়।’
নারীদের রাজনৈতিক সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ভালো কাজ করছে তা রাজনীতির ফসল। আমরা খাই, ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠাই, সকালে কল চাপলে পানি আসে, এর সবগুলোই কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। রাজনীতির বাইরে কোনো কিছু নয়। সেই রাজনীতিকে আপনি দূরে ঠেলে দিলে, শুধু দেশ নয়; সারাবিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব জায়গায় ভালো-মন্দ আছে। রাজনীতিতেও ভালো-মন্দ আছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিকে রফতানিমুখী করতে হবে। আমরা এখন আমদানিমুখী অর্থনীতিতে আছি। রফতানিমুখী অর্থনীতির জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং করতে হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং উন্নয়ন হলেই আমাদের জন্য প্রযোজনীয় কর্মসংস্থান হবে।’
তিনি বলেন, ‘১০ হাজারের উপরে ব্যাংকের ব্রাঞ্চ আছে। প্রতিটি ব্রাঞ্চকে দায়িত্ব দেয়া আছে বছরে তারা তিনজন নারীকে প্রশিক্ষণ দেবে। সেই তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনকে তারা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবরকম সহায়তা করবে। আমাদের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে এ কথা আমি বলতে পারব না। কারণ নারী উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়ে আমাদের মধ্যে এখনো কিছু সংকোচ রয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, ‘২০১০ সালে সিএসএমই নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। সেটা ২০১৮ সালে হয়েছে ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০১৮ এ নয় বছরে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চারগুণের বেশি। এ ছাড়া ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল এ নয় বছরে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।’
এমএএস/এনডিএস/পিআর