ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘নারীর অধিকার সুনিশ্চিতে নারী বিচারকদের আন্তরিক হতে হবে’

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৯

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নারীদের অংশগ্রহণ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও তারা এখনো নির্যাতিত হচ্ছে ঘরে ও ঘরের বাইরে। এ নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, নারীরা পরিবার তথা সমাজ ও জাতির মূল চালিকশক্তি। তাই আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য নারী বিচারকদের আন্তরিক হতে হবে। সহস্রাব্দের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে সততা, পরিশীলতা ও সমুন্নত করে তুলতে হবে। একটি জেন্ডার ব্যালেন্স বা লিঙ্গ সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের ২৯তম সাধারণ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী আনিসুল হক। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিচারকর্ম বিভাগও এ উন্নয়নের অংশীদার। তাই বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য নারী বিচারকদেরকে স্বীয় মেধা, মনন ও কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। কীভাবে হয়রানিমূলক মামলা কমিয়ে মানুষকে অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে ও সহজে বিচারিক সেবা নিশ্চিত করা যায় তার প্রতি লক্ষ্য রাখাও তাদের দায়িত্ব বলে স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী।

নারী বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা নারী ও পুরুষ নন, শুধুই বিচারক। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতার সঙ্গে পালন করে বিচারক হিসেবে তাদেরকে জনগণের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে হবে। সেজন্য বিচারিক জ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি ও মামলা ব্যবস্থাপনায় তাদের দক্ষতা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। দৈনিক কর্মঘণ্টা যেন বিচারকর্মে যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাও তাদের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে, বিশ্বের যে কোনো দেশের যে কোনো বিষয় এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নারীদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্টপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে এই স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্টের কথা মনে রাখতে হবে। যাতে তাদের পেশাগত গোপনীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট বজায় থাকে।

নারীদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন গৃহীত দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়েই নারী বিচারকদের বিচার প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে। যেসব জুডিসিয়াল কাপল রয়েছে, তাদেরকে একই স্টেশনে পদায়ন এবং অন্যান্য চাকরিজীবী কাপলদের ক্ষেত্রেও পারিবারিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে তাদের পদায়নের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখছে।

তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের এটিও মনে রাখতে হবে যে, বিচার বিভাগের চাকরি বদলীযোগ্য হওয়ায় তাদের কর্মজীবনের সকল পোস্টিং সবসময় সুবিধাজনক স্থানে না-ও হতে পারে। তাই এই চ্যালেঞ্জকে সহজভাবে মেনে নিয়ে বিচারকর্মে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো বিচার বিভাগে নারীদের যোগ দেয়ার বাধা বিলুপ্ত করা হয়। শুরু হয় অধস্তন আদালতে নারী বিচারকদের পথচলা। এরপর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১১ সালে আপিল বিভাগে সর্বপ্রথম নারী বিচারপতি নিয়োগ দেন। তাছাড়া ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এখন বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ, অন্যান্য পেশার মতই লক্ষণীয় হারে বাড়ছে।

সর্বশেষ ১১তম বিজিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৫৩ জন নারীর বিচার বিভাগে যোগদানের পর বর্তমানে মোট বিচারকের শতকরা প্রায় সাড়ে ২৭ ভাগ হচ্ছেন নারী বিচারক। যা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক ও উৎসাহমূলক। এ সংখ্যা ইউরোপ আমেরিকাসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি।’

বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি জিনাত আরা ও সলিসিটর জেসমিন আরা বেগম বক্তৃতা করেন।

এমইউ/এসআর/পিআর

আরও পড়ুন