ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

জমি তুমি কার : স্বাস্থ্য নাকি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের?

প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অদূরে চাঁনখারপুলের পাশে পদ্মা অয়েল কোম্পানির পেট্রল পাম্পের প্রবেশমুখে দুই তিন দিন আগে একটি সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে, যাতে লাল হরফে বড় বড় করে লেখা ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জন্য নির্ধারিত স্থান’।

পেট্রোল পাম্পের ভেতরে অন্য আরেকটি সাইনবোর্ডে কালো হরফে বড় বড় করে লেখা ‘এই পেট্রল পাম্পের জায়গা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে ৩০ বছরের জন্য ইজারাপ্রাপ্ত-আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।’
পাল্টাপাল্টি সাইনবোর্ডের এ লেখাগুলো ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সকল সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সকলের মনেই প্রশ্ন জেগেছে এ জমির প্রকৃত মালিক কে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নাকি গণপূর্ত অধিদফতর।
 
দেশের পোড়া রোগীদের অধিকতর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ও উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন চিকিৎসক তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাজধানীর চাঁনখারপুলের যক্ষা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই একর জমির ওপর বহুতল ভবন বিশিষ্ট ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

কাজ শুরুর লক্ষ্যে গত সপ্তাহে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে সাইনবোর্ড বসাতে গেলে চাঁনখারপুল পেট্রল পাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাধা দেন। এ সময় তাদের মধ্যে প্রচণ্ড কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে হাতাহাতির পর্যায়ে গেলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
 
পেট্রল পাম্পের লোকজন দাবি করে এ জমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, গণপূর্ত অধিদফতরের। অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ঢামেক থেকে যারা সাইনবোর্ড লাগাতে গিয়েছিলেন তারা জানান, চানখারপুল যক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জমির মালিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

শুক্রবার সকালে চাঁনখারপুলের পেট্রল পাম্পটি পরিদর্শনকালে পেট্রল পাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ১৯৫৩ সাল থেকে এই স্থানটিতে পেট্রল পাম্প চলছে। যখন ঢাকা শহরে মাত্র দুটি পেট্রল পাম্প ছিল তখন একটি সদরঘাটে অপরটি চানখারপুলের এ পাম্প। বর্তমানে পাম্পটি গণপূর্ত অধিদফতর থেকে ৩০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে মালিক চালাচ্ছেন।

অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাঁনখারপুলের যক্ষা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দুই একর জমির মালিক তাদের মন্ত্রণালয়। তাদের জায়গায় পেট্রল পাম্পটি অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। বার্ন ইনস্টিটিউটের কাজ  শুরু হলেই তাদের উচ্ছেদ করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জমির মালিক হলে এতদিন কিভাবে চললো এ প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্লাস্টিক সার্জনদের বার্ষিক সম্মেলনে এসে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন।

এরপর গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো. জুলফিকার আলী বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চলতি মাসেই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে এসেছেন।
 
উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেড় হাজার উচ্চ ডিগ্রিধারী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ৫২ জন।

এমইউ/এসকেডি/এসএইচএস