ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শপথ নিলেন, টিকবেন তো মনসুর?

সিরাজুজ্জামান | প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৯

দল ও জোটের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

ধানের শীষ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ থেকে নির্বাচিত সুলতান মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও তার এ পদ এখন ঝুঁকির মধ্যে। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফলে এ জোট থেকে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলে জানানো হয়।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এখন আলোচনায়। কারণ দল থেকে ঘোষণা দেয়া হয় শপথ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। আর দল যদি তাকে বহিষ্কার করে তাহলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

এ বিষয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-
(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার কমিটির সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম জাগো নিউজকে বলেন, যদি কেউ দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন। তাহলে তার আসনটি শূন্য হবে।

তবে কেউ যদি পদত্যাগ না করে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয় এবং এ কারণে দল তাকে বহিষ্কার করে তাহলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিষয়ে এখানে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।

তিনি আরও জানান, সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথগ্রহণ না করলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তবে স্পিকার চাইলে যুক্তিসঙ্গত কারণে সময় বাড়াতে পারেন।

নবম সংসদের শেষের দিকে জাতীয় পার্টি থেকে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এইচ এম গোলাম রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদে তার সদস্যপদ বহাল ছিল।

সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, অষ্টম সংসদে (২০০১-২০০৬) ক্ষমতাসীন বিএনপি থেকে রাজশাহী-৪ আসনের আবু হেনাকে বহিষ্কার করা হয়। সে ক্ষেত্রেও তার সদস্যপদ বহাল ছিল। দুটি ক্ষেত্রেই সংসদের ব্যাখ্যা ছিল, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা নিজেরা পদত্যাগ করেননি। সুতরাং তাদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।

দশম সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করে। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ জন্য তার আসনটি শূন্য হয়েছিল।

এ বিষয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নেয়ার পর জাগো নিউজকে বলেন, আমার সংসদ সদস্য পদ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ আমি দল থেকে পদত্যাগ করিনি। আশা করি দল আমাকে বহিষ্কার করবে না।

সুলতান মনসুরের এই শপথ নেয়ার বিষয়টিকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না তার দল গণফোরাম। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মণ্টু এ বিষয়ে বলেন, দলের বাইরে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আজ বিকেলে আমরা বসবো। ড. কামালও থাকবেন। সেখানে আমরা আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

গণফোরামের শীর্ষনেতা এবং মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম বলেন, উনি গণফোরামের গণতন্ত্র মেনে এনে এই দলে যোগদান করেছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এখন কার ইশতেহার ধারণ করে তিনি সংসদে গেলেন সেটা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন।

লতিফুল বারী আরও বলেন, আমাদের ধারণা উনি বিশেষে প্রলোভনে এবং বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য সংসদে গেছেন। এ জাতীয় রাজনীতিবিদদের ধিক্কার ও ঘৃণা জানানো উচিৎ। সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য তিনি সংসদে গেছেন। জনগণের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ আমরা আশা করছি। কোনো রাজনীতিবিদ যেন এ ধরনের কাজ যেন ভবিষ্যতে করতে না পারে। সেজন্য তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এবং কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা আসতে পারে।

সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বহিষ্কার করলে তো সব শেষ। প্রথমে তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোসহ নানা আইনি পদক্ষেপের চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাকে কারণ দর্শাতে সময় দেয়া হবে। এরপর তার উত্তরের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে সুলতান মনসুরের শপথ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষের সঙ্গে ছলনা এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে শপথ নিয়ে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর এক সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে দলে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়ার পর তিনি কামাল হোসেনের সঙ্গে ভেড়েন।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গণফোরাম গঠনকারী কামাল হোসেন কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি ফোরাম গড়ে তোলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার সময় গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দুটোই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।

এইচএস/এএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন