বৃষ্টির আত্মহুতি : সোহাগ অনিকের খবর জানে না পুলিশ!
অনৈতিক সম্পর্কের জেরে হলেও অনাগত সন্তানের কোনো দোষ ছিল না। তাই সন্তানের স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছে ধর্ণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির চোখের পানিতে মন গলে নি কারো। তাই আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছিল সে। কিন্তু অপরাধীরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সদর্পে। পুলিশ জানে না আসামীরা কে কোথায়।
আত্মহত্যার পর পরিবারের করা মামলায় মূল অভিযুক্ত বাংলা কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম জাহিদ গ্রেফতারও হয়। অপর আসামী বর্তমান সরকারি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান অনিক। কিন্তু অনিকের কোনো খবর জানে না পুলিশ। এছাড়া জাহিদ ইতোমেধ্যে জামিনে থাকলেও সে খবর কাফরুল থানা পুলিশের অজানা।
জানা গেছে, গত ১৩ই জুন নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বৃষ্টি। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ জুন মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনি। ২৬ জুন (শুক্রবার) বৃষ্টির বাবা ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন জাহিদ ও অনিকের নাম উল্লেখ করে কাফরুল থানায় মামলা (মামলা নং ৮২) করেন। পরে জাহিদকে গ্রেফতার করলেও রিমান্ডে নেয় নি পুলিশ।
বাংলা কলেজ ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রেম চলছিল কাফরুল থানা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদিকা বৃষ্টি ও এইচ এম জাহিদ সোহাগের মধ্যে। বৃষ্টি সরকারি বাংলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। সোহাগ ছিলেন একই কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। প্রেমের একপর্যায়ে বৃষ্টি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ভোল পাল্টায় সোহাগও। বিয়ের চাপ এড়িয়ে চলা শুরু করে সোহাগ। একপর্যায়ে পুরো যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছে ধর্ণা দিয়ে লাভ না হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বৃষ্টি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক(এসআই) খন্দকার মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, জাহিদ জামিন পেয়েছি শুনেছি। তবে সে কোথায় তা তার জানা নেই। এছাড়া অনিক পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা কলেজে দাপটের সংগে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণেই তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ১২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আর ২/৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া বাকি আছে। সাক্ষ্য গ্রহণ ও তদন্ত শেষ হলে চার্জশিট দেয়া হবে।
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জাহিদ সরকারি দলের এক এমপির ঘনিষ্ঠ। অনিকও সম্প্রতি কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এসব কারণে এত বড় অন্যায় করেও সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা।
অন্যদিকে, জাহিদ ও অনিক নিয়মিত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নিহত বৃষ্টির পরিবারের সদস্যরা। নিহত বৃষ্টির মামা জুয়েল রানা বলেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঘটনার এতো দিন হচ্ছে পুলিশের আসামী ধরার নাম নেই। আসামী অনিক ঘুরে বেড়ালেও না দেখার ভান করছে পুলিশ।
পুলিশের মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) কাইয়ুমুজ্জামান বলেন, জাহিদকে জামিন দেয়া আদালতের এখতিয়ার। তবে আমি আবারো তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করবো। যেন অনিককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ মামলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জেইউ/এএইচ