কেমিক্যাল কারখানা অপসারণে কাউকে ছাড় নয়
চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মত মর্মান্তিক দুঘর্টনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনোই না ঘটে। সে লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল, দাহ্য পদার্থের গোডাউন পুরান ঢাকা থেকে সরিয়ে ফেলতে যা যা করণীয় সবই করা হবে। এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আলোচকরা।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের নগর ভবনের সেমিনার কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণকল্পে এক বিশেষ জরুরি সভায় এসব কথা বলেন আলোচকরা।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘পুরান ঢাকাকে কীভাবে বসবাস উপযোগী করা যায় সে লক্ষ্যে মেয়রের নেতৃত্বে আপনারা সেবা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করুন, আমাদের পক্ষ থেকে যে সব সহযোগিতা দরকার, আমরা তার সর্বোচ্চ প্রদান করব। পুরান ঢাকায় আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা আলাদা করে কেমিক্যাল কারখানা অপসারণে যে টাক্সফোর্স গঠন হবে আমরা সেখানে সার্বিক সহযোগিতা করব। কেমিক্যাল কারখানা অপসারণে এবার ভালোভাবে নামতে হবে। কাউকে এক বিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এখানে কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বলতে চাই, আপনারা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, একজন নাগরিক, একজন মানুষ হিসেবে বিষয়টি দেখেন। কারণ কেমিক্যাল কারখানা থাকলে এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই আমাদের জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বসবাস উপযোগী এলাকা গড়ে তুলতে আপনারা সহযোগিতা করুন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা অপসারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিল্ডিং কোড না মেনে যারা ভবন নির্মাণ করেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। নিমতলীর ঘটনার পর চকবাজারের ঘটনা ঘটল। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। আমরা আর এমন কোনো দুর্ঘটনা দেখতে চাই না। সে লক্ষ্যে কাউকে এক বিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, ‘চকবাজারের ঘটনায় আমাদের কাজ করতে খুব সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছিল। সরু রাস্তা ভেতরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের খুবই চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। সময় এসেছে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া। সব ধরনের আইন মেনে বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। তা না হলে বিপদ আমাদের পিছু ছাড়বে না। সেই সঙ্গে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিয়ে লং টাইমের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুর রহমান বলেন, ‘চকবাজার এলাকায় দুর্ঘটনার পর আমরা পুরান ঢাকায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে কি কি কাজ করতে হবে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে কীভাবে শৃঙ্খলার আওতায় আনা যায় সে সব বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে আগামী এক মাসের মধ্যে সব কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ করা হবে। একই সঙ্গে যেসব বাসা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিকর কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য পাওয়া যাবে সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।’
২৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণের কাজ শুরু হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এ জন্য দুই স্তরের টাক্সফোর্স গঠন করা হবে। ১ম স্তরে থাকবে সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানসহ অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা এ কার্যক্রম বিষয়ক পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং বাস্তবায়নের কাজ করবেন। আর ২য় স্তরের সদস্যরা অন গ্রাউন্ডে থেকে কাজ করবেন।’
সংস্থাগুলোর প্রধানদের উদ্দেশে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘অভিযানের সময়ে যেসব বাসায় বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিকর কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য পাওয়া যাবে আপনারা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। আমরা ১৫টি ওয়ার্ড ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। ২/৩টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে কাজ করা হবে।’
২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ এপ্রিলের মধ্যে পুরান ঢাকা থেকে সমস্ত কেমিক্যাল বা ক্ষতিকর দ্রব্যের কারখানা অপসারণ করা হবে বলেও জানান মেয়র সাঈদ খোকন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, ওয়সার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান, তিতাস গ্যাসের এমডি মোস্তফা কামাল, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক সোহরাব আলী, বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক শামসুল আলম, ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহম্মাদ ফেরদৌস খান, ডিপিসির এমডি বিকাশ দেওয়ানসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধি এবং পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
এএস/এনডিএস/এমএস