মায়ের ওষুধ কিনতে গিয়ে নিখোঁজ নাফিজ
অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের বাসা থেকে বের হন নাফিজ। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে মায়ের ওষুধ নিয়ে আর ঘরে ফেরা হয়নি এই ব্যবসায়ীর। বাসা থেকে বের হওয়ার পর ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নাফিজ কী অবস্থায় আছেন তা জানতে পারেননি তার স্বজনরা।
বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায়’র যে স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তার পাশেই একটি ফার্মেসিতে মায়ের ওষুধ কিনতে নাফিস বাসা থেকে বের হন নাফিজ। বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান তার ভাতিজি ফাতেমা।
নিখোঁজ চাচাকে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল মর্গ এবং জরুরি বিভাগ সংলগ্ন জরুরি মর্গে ছুটাছুটি করতে দেখা যায় ফামেতাকে। ছুটাছুটি করে কিছুক্ষণ বিমর্ষভাবে ফাতেমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় জরুরি মর্গের সামনে। এসময় তার হাতে ধরা ছিল চাচা নাফিজের ছবি।
কাছে গিয়ে এখানে কেন এসেছেন এমন প্রশ্ন করলে ফাতেমা বলেন, ‘আমার চাচাকে খুঁজতে এসেছি। কাল (বুধবার) চকবাজারের যেখানে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল, তার পাশেই একটি ফার্মেসিতে চাচা আমার দাদীর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে চাচার আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’
‘এখানে-ওখনে সব জায়গায় খুঁজেছি। কেউ আমার চাচার খোঁজ দিতে পারছে না। চাচাকে খুঁজতে আর কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। যাকেই ছবি দেখাচ্ছি, সেই বলছে অপেক্ষা করেন ছবি ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। ওদিকে আমার অসুস্থ দাদী চাচার চিন্তায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’ বলেন ফাতেমা।
এদিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৬৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী।
তিনি জানান, ৬৭ জনের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ৩৭ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে ১২ জনকে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিরা নিখোঁজ হিসেবেই ধরে নেয়া হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ শনাক্ত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ।
আগুনে পোড়া মৃতদেহ শনাক্ত করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, অগ্নিদগ্ধ মরদেহ শনাক্তকরণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। কারণ এ সময় মুখের বা দেহের আকৃতি চেনা যায় না। পরিধেয় কোনো কিছু চেনা যায় না।
মৃতদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যেটুকু শুনেছি যারা মারা গেছেন তারা অত্যন্ত ভয়ঙ্করভাবে পুড়ে গেছেন। তাদের এখন ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। ডিএনএ টেস্ট করে নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে ম্যাচিং করতে হবে। যদি তাদের নিকট আত্মীয়দের শনাক্ত করা যায়, সেক্ষেত্রে নিখোঁজ যারা তাদের মরদেহগুলো আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা যাবে।
এমএএস/আরএমএম/এসএইচএস/পিআর