জার্সি দেখে ছেলেকে চিনলেন মা
‘ও ভাই আমাকে মাটি দিবা না। আমারে ছাড়িয়া কই গেলা। ও ভাইরে তোরে আর দেখতে পাব না। ও ভাই তুমি কই গেলা। আমি ভাইরে দেখমু। আমারে ভাইয়ের কাছে নিয়া যাও।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের সামনে নাতির (মেয়ের ছেলে) জন্য এভাবেই আহাজারি করছিলেন ৯০ বছরের বৃদ্ধা মমতাজ বেগম।
বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন মমতাজ বেগমের নাতি নয়ন। যার মৃতদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে।
মর্গের সামনে বৃদ্ধা মমতাজ বেগমের সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে ও নয়নের মা কোহিনুর বেগম। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নয়নের দুই বোন।
নয়নের মা কোহিনুর বেগম বলেন, নয়ন চকবাজারের একটি দোকানে কাজ করত। প্রতি মাসে বেতন পেত ৬ হাজার টাকা এবং প্রতিদিন ১০০ টাকা করে পেত। এ টাকা দিয়েই চলতো তাদের সংসার।
তিনি বলেন, নয়ন ফুটবল খেলতে ভালোবাসতো। আজ ওদের ফুটবল খেলা ছিল। নয়নের গায়ে সেই ফুটবলের জার্সি ছিল। জার্সিতে নয়নের নাম লেখা রয়েছে। এই নাম লেখা দেখেই তারা মেডিকেলে নয়নের লাশ চিনতে পেরেছেন।
নয়নের মৃত্যুর খবর কীভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নয়নের এক বোন বলেন, আমরা দোকান মালিককে ফোন দিলে তিনি বলেছিলেন সাড়ে দশটায় দোকান বন্ধ করে ভাইয়া বের হয়ে গেছেন।
‘কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইয়াকে না দেখতে পেয়ে আম্মাকে বলি ভাইয়া বাসায় ফেরেনি। তখনও আমরা জানি না চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানতে পেরে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসি। এখানে এসে ভাইয়ার গায়ের জার্সি দেখে আমরা ভাইয়াকে চিনতে পেরেছি’ বলেন নয়নের ওই বোন।
নয়নের বাবা কী করেন জানতে চাইলে নয়নের নানি মমতাজ বেগম বলেন, ওর বাবার নাম নেবেন না। ওর কোনো বাবা নেই। ওরা চার বোন এক ভাই, আর ওদের মা ছাড়া কেউ নেই। এ সময় পাশ থেকে একজন বলেন নয়নের বাবা ওদের সঙ্গে থাকেন না।
এমএএস/এসএইচএস/পিআর