আগুন নিয়ন্ত্রণে, চলছে লাশের খোঁজ
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট টানা চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
বুধবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান। পরে তা পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের ২০০ কর্মী।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাগো নিউজের প্রতিনিধি জানান, তিনি নিজ চোখে চারটি মরদেহ উদ্ধার হতে দেখেছেন। সেগুলো সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত নয় থেকে দশজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান জানান, অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে নয় থেকে ১০টির মতো মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন তারা পুরো এলাকায তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন।
তল্লাশি সম্পন্ন হলে হতাহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে কর্মরত কর্মকর্তা মাহফুজ রিবেন জাগো নিউজকে জানান, রাত ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন। তিনি আগুনের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে ব্রিফ করবেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রাত আড়াইটার পর সাংবাদিকদের জানান, আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তিনি এ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরে উপ-পরিচালক দিলিপ কুমার ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয়রা কেউ কেউ বলেন, প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে, আবার কেউ বলছেন, ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। হোটেলের সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলেও কেউ কেউ জানান।
তবে দিলিপ কুমার ঘোষ বলেন, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে জানা যাবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাগো নিউজের প্রতিনিধি জানান, রাত পৌনে ২টার দিকেও আগুনলাগা ভবন থেকে ছোট ছোট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আগুনের ফুলকিও দেখা যায়। পানির স্বল্পতার কারণে স্থানীয় মসজিদ এবং পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় আবদুল মজিদ জানান, যে ভবনে প্রথম আগুন লাগে, তার নিচতলায় একটি দোকান, দোতলায় বিভিন্ন প্রসাধন-প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম এবং উপরের তলাগুলোতে মানুষের বসবাস ছিল।
আগুন লাগার পর ভবনের সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে; ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়। সেগুলোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবরও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, আগুন লাগার পর ভবন থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে জখম হন অনেকে। লাফিয়ে নামতে গিয়ে হাত-পাও ভাঙেন কেউ কেউ। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ভর্তি করা হয়েছে।
ঢামেকের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া ৩৭ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখানে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- আব্দুল মান্নান (৬০) ও হেলাল উদ্দিন (১৮)।
ঢামেকে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে আলামিন (২৫), রিমন (২৮), সিয়াম (২৩), রেজাউল (২১), বাবুল (২৮), শহিদ (৫২), শহিদুল্লাহ (৫০), করিম (৫০), শামীমুর রহমান (৪২), সাইফুল (৩৫), সালাউদ্দিন (২৬), জাকির হোসেন (৫০), মাহমুদ (৫০), লামিম (১২), আনোয়ার (৫৫), সালাউদ্দিন (৩৫), পীর মোহাম্মদ (৪৭), কাউছার (৪৫), সোহেল (৩৫), পলাশ (৩৫), জাহাঙ্গীর (৩৫), সালাম (৩৫), রবিউল (২৭), মন্জুরুল আলম (৪৫), জিয়াউদ্দিনের (২৪) নাম জানা গেছে।
এমইউ/এআর/এমএআর/বিএ