জাতীয় তথ্য ভান্ডার করতে চায় এনটিএমসি
দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সব তথ্য একই প্ল্যাটফর্মে আনতে জাতীয় তথ্য ভান্ডার (ডাটা হাব) করতে চায় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিএমসি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব তুলে ধরে এনটিএমসি।
বৈঠকে এনটিএমসির প্রতিনিধিরা বলেন, রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে 'টেলিকমিউনিকেশ ডাটা হাব' তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। ডাটা হাবে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইইউ), মোবাইল ব্যাংকিং, শিক্ষাবোর্ড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যুক্ত করা হবে।
টেলিকমিউনিকেশন ডাটা হাবের সঙ্গে জাতীয় ডাটা হাব সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য যাচাইয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এখান থেকে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পৃথকভাবে সুবিধা পাবে যার জন্য নিজস্ব আলাদা ডাটা হাবের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সুবাদে অপরাধীরা বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ভার্চুয়াল অপরাধকে প্রতিরোধ করতেই এনটিএমসি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে আরও কতটা সমৃদ্ধ করা যায় কিংবা তাদের ঘাটতিগুলোর বিষয়ে আলোচনা করতেই আজকের বৈঠক। তাদের কাজের সুবিধার জন্য কি কি প্রয়োজন আমরা শুনেছি।
দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পর্যায়ক্রমে সব করণীয় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা তথা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তায় এনটিএমসির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় পর্যায়ে সব তথ্যের সমন্বয়ে একটা কমন প্ল্যাটফর্ম করার প্রপোজাল রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তাদের সেন্ট্রাল ডাটা হাব তৈরির প্রস্তাবনাটি বিবেচনাধীন রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব। তিনি সায় দিলে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতেই এনটিএমসি গঠন করা হয়েছে। সংস্থাগুলোর যার যখন প্রয়োজন এখানে আসছেন এবং তথ্য নিচ্ছেন। সকলের মধ্যে চমৎকার সমন্বয় রয়েছে।
এনটিএমসির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, এখানে বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সব বাহিনীর প্রতিনিধি রয়েছে। একটা ভুয়া ফেসবুক আইডির জন্য যদি লোকাল থানা সরাসরি ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে সেটা ফলপ্রসূ হবে না। সবার চাহিদা আমাদেরকে পাঠালে, আমরা সবার তথ্য একসঙ্গে করে কেন্দ্রীয়ভাবে যোগাযোগ করি। যার ফলে বেশ কিছু আইডি ইতোমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির অপরাধ অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বেশকিছু ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই পক্ষের আলাপের মধ্যে কোনো পক্ষ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও এমনটা করতে পারে। এসব কখনোই কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা এনটিএমসি থেকে হয়নি।
গুজব প্রতিরোধে এনটিএমসি ও বিটিআরসি একসঙ্গে কাজ করছে, যার সুফল গত নির্বাচনে দেখা গেছে বলে দাবি করেন এনটিএমসির পরিচালক।
ভার্চুয়াল জগতে অপপ্রচার রোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিংসহ ব্লকিং ও ফিল্টারিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এনটিএমসি। যার ফলশ্রুতিতে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া তৈরি ৭৫২টি ফেসবুক আইডি, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার ব্যক্তিবর্গের নামে ভুয়া ৭১টি ফেসবুক লিংক বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত ৫৪টি ওয়েবসাইট, সেনাবাহনীর নামে ভুয়া ৫৭৮টি ফেসবুক আইডি, ২৭০টি ফেসবুক পেজ, আটটি ফেসবুক গ্রুপ, নৌ বাহিনীর নামে ভুয়া ১৫টি ফেসবুক পেজ, ছয়টি গ্রুপ, নির্বাচন কমিশনের নামে আটটি ভুয়া ফেসবুক আইডি, তিনটি পেজ ও ১৪টি গ্রুপ বন্ধ করা হয়েছে।
এআর/এএইচ/এমকেএইচ