ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কমিটি ‘স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুষ্ট’

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় লিপ্ত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গত রোববার সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করে সরকার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ ঘোষণা দেন। শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতিও।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতিকে প্রধান করে এবং পরিবহন ব্যবসায় সম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ব্যক্তিবর্গের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় টিআইবি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় লিপ্ত ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের একচ্ছত্র প্রাধান্য থাকায় ‘স্বার্থের দ্বন্দ্বের’ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এ কমিটি গঠন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই অবিলম্বে সুখ্যাতিসম্পন্ন ও সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞজনকে প্রধান করে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

‘প্রয়োজনে শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কমিটির বাইরে থেকে প্রদত্ত সুপারিশ কমিটি বিবেচনায় নিতে পারে’ বলেও মত দেয় টিআইবি।

শাজাহান খানকে কমিটির প্রধান করায় সমালোচনার ঝড় ওঠে সংসদসহ বিভিন্ন মহলে। তাকে দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব কিনা- তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। গতকাল সোমবার সংসদে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আর শাহজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?’

‘‘গরু-ছাগল চিনলে লাইসেন্স দেয়া যাবে’ শাজাহান খানের ওই মন্তব্যে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছিল। ওনার এক হাসি ওই সময় দেশে কী পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তাকে দিয়ে সরকারের কতখানি কমিটমেন্ট রক্ষা হবে?”

জাতীয় পার্টির এমপির ওই সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অভিজ্ঞ মানুষ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাকে প্রধান করার সময় উপস্থিত কারও কোনো বিরোধিতা আসেনি। এখানে তার কোনো স্মিত হাসির জন্য কী সমস্যা হয়েছে, সেটা দেখব না। এখানে ব্যক্তি কোনো বিষয় নয়। দেখা হবে তারা সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে সবাই মিলে কী সুপরিশ তৈরি করেন, পেশ করেন। তার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম নেয়া হবে।’

সড়ক পরিবহন ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ জাতীয় কমিটিতে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা রীতিমতো ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদও। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ওই শ্রমিক নেতার কারণেই সড়কে যত প্রাণহানি ও বিশৃঙ্খলা। যখনই সড়কের অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে তখনই এই শাজাহান খানরাই বাধা সৃষ্টি করেছে। মূলত সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য ওই নেতাই অনেকাংশে দায়ী। কাজেই তাকে আহ্বায়ক করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে যে কমিটি গঠিত হয়েছে তা জাতির সঙ্গে তামাশা মাত্র।’

এদিকে মঙ্গলবারের বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগই যখন দেখা যাচ্ছে না, তখন অবশেষে যেভাবে কমিটি গঠিত হলো তাও সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কমিটির প্রধান হিসেবে ইতিপূর্বে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং একচোখাভাবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রভাবশালীজনকে কমিটিতে নিয়োগ দেয়ায় এ কমিটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে- এমন আশা করা অসম্ভব।’

‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ইতিপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রাক্তন নৌপরিবহনমন্ত্রীর বিতর্কিত ভূমিকা ও প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরও শ্রমিকদের অনায্য দাবির পক্ষে তার এবং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত একাধিক সদস্যের প্রত্যক্ষ অবস্থান তাদের নিরপেক্ষতা ও দুর্ঘটনা কার্যকর নিয়ন্ত্রণের স্বদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, “আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী ‘সবক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা’র যে ঘোষণা দিয়েছেন, এই কমিটি গঠন তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’’

ড. জামান বলেন, “সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ওপর টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, সড়ক পরিবহন খাতে সীমাহীন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বিচারহীনতা, দায়িত্বে অবহেলা ও প্রভাবশালীদের লাগামহীন অসাধু দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে সড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া যান চালনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পরিবহন খাত কমিটি প্রভাবশালী শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের সাংবিধানিক অঙ্গীকার নির্বিকারভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটি আদতে কোন কার্যকরী ফল আনবে না।”

‘সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তি বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট খাতে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ; নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রের অংশীজন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এই কমিটি পুনর্গঠন করা।”

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী কারও অনায্য দাবির কাছে মাথানত করবেন না, জনগণ এই প্রত্যাশা করে, বিশেষ করে দেশের তরুণ প্রজন্ম যারা শুধু নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করেনি, বরং নিরাপদ সড়ক যে সম্ভব তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তাদেরকে হতাশ করা সরকারের অদূরদর্শিতার পরিচায়ক হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কোন ধারা আরও শিথিল করার উদ্যোগ নেয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী ও জনস্বার্থ পরিপন্থী।”

এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন