ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

টার্গেট ছিল পারভেজ, খুন হন রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক | জসীম উদ্দীন ও জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৪:২৪ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 

দু’জনই মাদক কারবারি। মাদকের কারবার নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বের জেরেই কদমতলীর মাদক কারবারি পারভেজকে খুনের পরিকল্পনা করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী পিংকি। দুই লাখ টাকা চুক্তিতে ভাড়া করা হয় পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েলসহ বেশ কয়েকজনকে। তবে কিলিং মিশনে নিরাপরাধ রাসেলকেও টার্গেট করা হয়। পিচ্চি সজল শুধু মনোমালিন্যের কারণে পারভেজের সঙ্গে এলোপাথারি চাকু চালান রাসেলের পিঠেও।

যাকে খুন করার জন্য তাদের ভাড়া করা হয় সেই পারভেজ প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা যান নিরাপরাধ রাসেল। যিনি চাকরির জন্য পিচ্চি সজলের কথায় এক সময় ঢাকায় এসেছিলেন।

রাজধানীর কদমতলী এলাকায় ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাতে সংঘঠিত ওই হত্যাকাণ্ডটি প্রথমে অজ্ঞাত ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হিসেবে প্রচারও করে মাদক কারবারি পিংকির লোকজন। তবে কদমতলী থানা থেকে ওই ঘটনার তদন্তভার পাওয়ার সোয়া তিন বছর পর ক্লু-লেস রাসেল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

রাসেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে (২৫) গত শনিবার গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি দল।

এরপর রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জাল হোসেনের আদালতে গ্রেফতাররা রাসেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার পিচ্চি সজল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের আমতলী এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে এবং হুন্ডা বাবু ঢাকার শ্যামপুর থানাধীন ফরিদাবাদ এলাকার হাজি গেট ব্যাংক কলোনির মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রাসেল (২২) গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করত। রাসেল তার মায়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পিচ্চি সজলের কথায় ঢাকায় আসে চাকরির সন্ধানে। দুই সপ্তাহ না যেতেই রাসেলের মা মোবাইল ফোনে জানতে পারেন রাসেল খুন হয়েছেন।

ঢাকায় আসার পর স্থানীয় সূত্রে রাসেলের মা জানতে পারেন, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে অজ্ঞাতদের ছুরিকাঘাতে মারা যায় রাসেল।

ওই ঘটনায় মা রাশিলা বেগম (৪০) অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১৯। কদমতলী থানা পুলিশ সুরতহাল শেষে মরদেহ মর্গে পাঠায়।

কদমতলী থানা পুলিশ তদন্ত শেষে ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। তবে খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মা আদালতে নারাজি আবেদন করেন। এরপর আদালতের আদেশে পিবিআই, ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) এসআই আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্ত শুরু করেন।

পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লুলেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তদন্ত করে এসআই আল আমিন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে ওই দিন রাতেই রাসেল হত্যায় জড়িত আরেক আসামি হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুর থানাধীন হাজি গেট ব্যাংক কলোনি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আদালতে জবানবন্দিতে সজল ওরফে পিচ্চি সজল ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু বলেন, কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্রের ব্যবসা করতো পিংকি ও পারভেজ। মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বিরোধের জের ধরে পারভেজকে খুন করার জন্য বাবু ও পিচ্ছি সজলদের দুই লাখ টাকার কন্ট্রাকে ভাড়া করে পিংকি। কিলিং মিশনের আগে অগ্রিম ৩০ হাজার টাকাও দেয়া হয়। খুনের পর পান বাকি টাকা।

তারা পারভেজকে খুন করার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাতে পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন একত্রিত হয়ে কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে নিয়ে আসে। সেখানে পিচ্ছি সজল কৌশলে রাসেলকেও নিয়ে আসেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে পারভেজ ও রাসেলকে এলোপাথারি চাকু মেরে পালিয়ে যায় পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন। গুরুতর অবস্থায় পারভেজ ও রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

পারভেজের কিলিং মিশনে রাসেলকে নিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে পিচ্চি সজল আদালতকে জানান, রাসেলের বাড়ি খুলনা জেলার রূপসা থানা এলাকায়। গ্রেফতার সজলও একই গ্রামে বিয়ে করে। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সজল বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি হওয়ায় প্রায়ই রাসেলের বাসায় রাত্রীযাপন করতো। রাসেলকে সজল টায়ারের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। তবে চাকরি দিতে না পারায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। ওই মনোমালিন্যের জেরে রাসেলকেও সুকৌশরে ঘটনাস্থলে ডেকে হত্যার উদ্দেশ্যেই উপর্যুপরি চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়।

জেইউ/জেএ/এনডিএস/

আরও পড়ুন