সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার দাবি
সড়ক দুর্ঘটনা ও এতে হতাহতের ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার দাবি করে এ বিষয়ে অবিলম্বে জরুরি অবস্থা জারির আহ্বান জানিয়েছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থী-পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
রাজধানীর উত্তরায় মাইক্রোবাস চাপায় পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ও দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারি সম্পাদক ফাইজুল ইসলামের একমাত্র কন্যা ফাইজা তাহসিন সূচির মৃত্যুর প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন ও শোকসভায় এ দাবি জানান তারা।
শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় ১৮ নং সেক্টরের ১০ নম্বর ব্রিজে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই ব্রিজের কাছেই দুর্ঘটনার শিকার হন ফাইজা। চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও খুনীদের গ্রেফতার করতে না পারায় ‘উত্তরা ১৮ নং সেক্টরের ফ্ল্যাট মালিকবৃন্দ’ এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সভায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা যায়, কোনো দেশে যুদ্ধেও তত মানুষ মারা যায় না। তাই অবিলম্বে এ ব্যাপারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা দরকার।
সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই দায়ীদের মৃত্যুদণ্ড চান। অথচ সংসদে পাস হওয়া এ সংক্রান্ত আইনে ৫ বছরের সাজা ঘোষণা করার পর সেই আইন এখনও কার্যকর হয়নি। এখন এটিকে জামিন যোগ্য করার জন্য চালকরা অন্যায় দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত একমাত্র কন্যাকে হারানো শোকাহত পিতা ফাইজুল ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন সেখানে উপস্থিত অন্যদের চোখেও পানি চলে আসে।
সন্তানহারা এই পিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ব্রিজে যদি স্পিড ব্রেকার থাকত, তাহলেও হয়ত আমার মেয়েটা বেঁচে যেত। এখানে গাড়ির গতি এত বেশি কেন-প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আগে মিরপুর থাকতাম। সেখানে এতটা গতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। এ এলাকায় এসেছি বেশি দিন হয়নি। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক হিসেবে বহুবার দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে লিখতে হয়েছে। এ পেশায় অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। কন্যার মৃত্যুর পর আজীবন তিনি এ পেশাতেই থাকার কথা ব্যক্ত করেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল সড়ক দুর্ঘটনা বিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড।
শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সবাই স্লোগান দেন, ‘নিরাপদ সড়ক চাই, সূচি হত্যার বিচার চাই’, ‘বাবার কাঁধে মেয়ের লাশ, চাই না চাই না’। এ সময় সূচির স্মরণে এক মিনিট নিরবতা ও দোয়া মোনাজাত করা হয়।
কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এস এম আজাদ, ইত্তেফাকের সাবেক বার্তা সম্পাদক শাহাব উদ্দিন ভূইয়া, ড. আব্দুল মুনিম খান, স্থানীয় ফ্ল্যাট মালিক সমিতির পক্ষে হামিদুর রহমান, সালাউদ্দিন কাউছার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সূচির দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের পাশে একজন অভিনেতা বসা ছিল। ঘটনার পর গাড়ি ও মোবাইল জব্দ করা গেলেও এখনও দায়ীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়নি। সড়ক অপমৃত্যুকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এইচএস/এমএমজেড/এমকেএইচ