শেষ হইয়াও হইল না শেষ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নির্ধারিত দিনক্ষণ অনুযায়ী আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি সম্মিলিতভাবে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে তাবলিগ জামাতের নেতারা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
তবে ইজতেমার শেষদিনে কে মোনাজাত পরিচালনা করবেন কিংবা নামাজে কে ইমামতি করবেন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে ফের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিবদমান দুপক্ষের দুজন করে চারজন মুরুব্বি বৈঠকে বসবেন।
আরও পড়ুন >> ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের মেয়র, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মাঠ তৈরিসহ সামগ্রিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সার্বিক নিরাপত্তা, ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের ভিসার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে ধর্মমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যে যা-ই বলি আমাদের সবার কথাই এক। সেটা হলো, তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষ আছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর একসঙ্গে ইজতেমাটা হবে- এ সিদ্ধান্ত তারাই নিয়েছেন। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা-গোলযোগ ছাড়া যাতে ইজতেমা শেষ হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা।’
‘আজকের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপরও ইজতেমা পরিচালনায় খুঁটিনাটি কিছু বিষয় থেকে যায়। যেমন- কে ইজতেমার নেতৃত্ব দেবেন, কে ইমামতি করবেন, কে মোনাজাত করাবেন- এসব বিষয়ে দুপক্ষ বসে আলোচনা করবেন। আমরা দুপক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছি, তারা বসে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
প্রসঙ্গত তাবলিগ জামাতের দিল্লির আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত। আলেমরা সাদবিরোধী ও সাদপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এক গ্রুপে রয়েছেন সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তাবলিগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। অপর গ্রুপে রয়েছেন মাওলানা সাদবিরোধী কওমীপন্থী শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।
আরও পড়ুন >> তাবলিগের ঐক্যে আবারও ফাটল!
এ বিভক্তি চরম রূপ ধারণ করে গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে ইজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল।
গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে দুপক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় সম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’র আয়োজনও করে আসছিল তাবলিগ জামায়াত। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে অঞ্চলভেদে দুই পর্বে এটি হয়। কিন্তু এবার দুপক্ষ চলতি মাসে আলাদাভাবে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে সরকার দুপক্ষের সঙ্গে সভা করে ইজতেমা স্থগিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, নির্বাচন শেষে দুপক্ষের সঙ্গে বসে অভিন্ন ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
আরও পড়ুন >> তাবলিগের মুরব্বিদের চোখের পানিতে আবেগঘন পরিবেশ
বিবদমান দুপক্ষের রেষারেষিতে বিষয়টি সুরাহ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত এ-সংক্রান্ত রিট খারিজও করেন।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিশৃঙ্খলা প্রশমিত করার উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে সব পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে দুগ্রুপ একসঙ্গে বসে এক পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে ঘোষণা দেয়।
ওইদিন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দ্বন্দ্ব নিরসনের পর তাবলিগ জামাতের দুপক্ষ মিলে ১৫-১৭ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা আয়োজন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সে সময় তিনি আরও বলেন, ‘দুপক্ষ দুটি ডেট ঠিক করছিলেন। একদল বলেছিল ৮ তারিখ (৮, ৯, ১০ ফেব্রুয়ারি), আরেক দল বলেছিল ২২ (২২, ২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি)। তখন মীমাংসার পথ হিসেবে আমরা প্রপোজ করেছি, এমন না হয় একপক্ষ বলবে ওনাদের কথামতো তারিখটা ঠিক হলো। আমরা দুটার মাঝামঝি একটা তারিখ রাখলাম ১৫, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি। ওই তিনদিন একসঙ্গে টঙ্গীর ময়দানে অন্যান্য বছরের মতো বিশ্ব ইজতেম সুন্দরভাবে পালিত হবে।’
ওইদিনের বৈঠকে দীর্ঘদিনের মতানৈক্য ভুলে তাবলিগ জামাতের দুই শূরা সদস্য হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম পরস্পরের সঙ্গে মুসাফা করেন এবং বুকে বুক মিলিয়ে চোখের পানি ফেলেন। এ সময় উপস্থিত তাবলিগের সাথী ও শুভাকাঙ্খীরা হাউ-মাউ করে কাঁদতে থাকেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
এমইউ/এসআর/এমএআর/পিআর