সাংবাদিক নির্যাতন : তদন্ত কমিটিতে হাজির হননি বারী
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে (এনআইডি) সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির শুনানিতে হাজির হননি প্রধান অভিযুক্ত ও উপ-প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বারী। এমনকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউই কমিটির কাছে তাদের দায় স্বীকার করেনি। ফলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের অভাবে কারো বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ না করে আরো উচ্চতর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
এদিকে হামলার ঘটনার সপ্তাহ পেরোলেও দোষীদের কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে এনআইডি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং সেখান থেকে সম্মানী নিচ্ছেন ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আব্দুল বারী। মঙ্গলবার ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি প্রায় ২শ পৃষ্টার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মূল প্রতিবেদন ৫ পৃষ্টার। আর প্রায় ৫০ জন ব্যক্তির বক্তব্য শুনেছে কমিটি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ক্লিপিংও সংযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এনআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান বেসরকারি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদক জি এম মুস্তাফিজুল আলম ও ক্যামেরাপারসন রিপু আহমেদ। তাদের কাজে বাধা ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এতে নেতৃত্ব দেন আইডিয়া প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) আব্দুল বারী। তার নির্দেশে আইডিয়া প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদেরকে মারধর, তাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ভাঙচুর ও মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় এনআইডির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ মোহাম্মদ মুসা এবং সদস্য করা হয় এনআইডির উপ-পরিচালক শহীদ আবদুস সালাম ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন। এ কমিটি সোমবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনআইডি কার্যালয়ে আবদুল বারী অনুপস্থিত থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এমনকি তার ব্যক্তিগত গাড়ি এখনো ফেরত দেননি। মঙ্গলবার সার্ভার স্টেশন সংক্রান্ত সিএসএসইডি প্রকল্পের পিআইসি বৈঠকে যোগ দেন তিনি। অথচ তদন্ত কমিটির শুনানিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকে গাড়ি পাঠালেও সেখানে তিনি অংশ নেননি। এমনকি কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য চেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তা আমলে নেননি আইডিয়া প্রকল্পের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা।
এছাড়া, নির্যাতিত দুই সাংবাদিক তাদের হয়রানি করার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের নাম বললেও প্রত্যেকে তা অস্বীকার করেছেন কমিটির কাছে। এমনকি ওই ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও কমিটিকে জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনআইডিতে কর্মরত অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কমিটির কাছে ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
ফলে কমিটির শুনানিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্য, ওইদিনের ঘটনায় উপস্থিত নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজের নির্দেশ অমান্যকারীদের নাম এবং প্রধান অভিযুক্ত আবদুল বারীর অনুপস্থিতি সব মিলিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি। এমনকি আবদুল বারী উপস্থিত না হওয়ায় আরো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের (যুগ্ম-সচিবের নিচে নয়) সমন্বয়ে উচ্চতর কমিটির গঠনের সুপারিশ করেছে গঠিত এ কমিটি। তবে তারা কাউকে শাস্তি কিংবা ঘটনায় কেউ জড়িত এমন মন্তব্য না করে ঘটনার পর্যবেক্ষণগুলো প্রতিবেদনে তুলে দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখনো তিনি কমিটির দেয়া প্রতিবেদনটি দেখেননি। তবে প্রধান অভিযুক্ত আবদুল বারী শুনানিতে অংশ নেননি এ বিষয়ে জানেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না’। ওনি না থাকলে, কমিটি সেভাবেই তাদের প্রতিবেদন দেবেন। এখনো কেন ওই কর্মকর্তা প্রত্যাহার হয়নি এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বৈঠকে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, উনি প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে তারা চিঠি লিখেছেন তাকে প্রত্যাহারের জন্য।
মঙ্গলবারও তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে বলে জানান। বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যাহার না হচ্ছেন ততক্ষণ তিনি আছেন এটাই ধরে নিতে হবে। তবে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ বলে জানান সচিব।
এইচএস/একে