ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আর্থিক খাত নিয়ে যা থাকছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে

মেসবাহুল হক | প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন আজ বুধবার শুরু হচ্ছে। বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন বসবে। বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় রীতি অনুযায়ী এদিন সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন।

ভাষণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি নানা দিকনির্দেশনা থাকবে। তার ভাষণে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আর্থিক সেবা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করাসহ একগুচ্ছ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক খাতে ঘটে যাওয়া নানা ধরনের দুর্নীতি আর অনিয়োমের বিষয়ে তেমন কিছু থাকছে না বলেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণে অন্তর্ভুক্তির জন্য সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বেশকিছু তথ্য সংবলিত একটি প্রতিবেদন বঙ্গভবনে পাঠিয়েছে। এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নানামুখী সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আর্থিক সেবা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে নানান সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

২০১৮ সালে সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও অর্জিত সাফল্যের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাবস্থাপনার শক্তিশালী করার মাধ্যমে আর্থিক বাজারের জন্য স্থিতিশীল ও নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দুটি ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। অপার একটি ডেটা সেন্টার স্থাপন চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক লেনদেনের পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক পরিশোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর্থিক লেনদেন সহজ ও নিরাপদ করার অংশ হিসেবে ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার) ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রদেয় ভাতাদি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের দ্রুততার সাথে অর্থ লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছেন। ব্যাংক গ্রাহকরা অপর ব্যাংকের এটিএম ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতে পারছেন।

দেশের উন্নয়নে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ১৫ লাখ ৭৬ হাজার নারী কৃষক ও উদ্যোক্তার মাঝে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ১১১টি ছিটমহলে এ ঋণ বিতরণের জন্য তফসিলি ব্যাংকসমূহকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গরুর কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি কমানো ও খাদ্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে এ তহবিলের ঋণের সুদের হার ৫ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

দেশের পুঁজিবাজার বিষয়ে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ-মেয়াদি পুঁজি সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট তিনটি নতুন বিধিমালা প্রণয়ন ও একটি বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড জারি করা হয়েছে। বিও হিসাবের লেনদেনের তথ্য মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে অবহিত করার ব্যবস্থা কর হয়েছে।

বিনিয়োগ শিক্ষার জন্য ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ বিভাগের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৬৮৫ জন বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা ও মধ্যস্থতাকারীকে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিনিয়োগ সপ্তাহ উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মাঝে ৯০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ১৭টি সিকিউরিটিজের মাধ্যমে ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ হয়েছে।

১৩টি কোম্পানিকে আইপিও, চারটি কোম্পানিকে রাইট ইস্যু, তিনটি কোম্পানিকে বন্ড ও ডিবেঞ্চার, ৯টি কোম্পানিকে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু, ৫৩টি পাবলিক লিমিটেড ও ১৪১টি প্রাইভেট কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্র বিভিন্ন সেবার ফি হ্রাস করা হয়েছে। এ ছাড়া ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের জন্য ডিজাস্টার রিকভারি সাইট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ছয় মাসে ডিএসই সূচক ৫ হাজার ২০০ থেকে ৮ হাজার ২০০ এর মধ্যে অবস্থান করছে। যা বর্তমানে বাজার স্থিতিশীলতার সাক্ষ্য বহন করে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির প্রায় ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০০১ সালের শেষে বাজার পুঁজির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের ইস্যুকৃত মূলধনের পরিমাণ ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা ২০০১ সালের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৭ গুণ বেশি।

বীমা খাত বিষয়ে বলা হয়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দুটি সরকারি বীমা কর্পোরেশনসহ ৭৮ বীমা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয় এবং সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় গ্রস প্রিমিয়াম ১০ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা হতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালে ১১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে বীমা কোম্পানিরসূমহের সম্পদ ৪৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা হতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে বেড়ে ৪৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

কিছু কিছু বীমা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন বীমা কার্যক্রম চালু করেছে। এটুআই এর সহযোগিতায় জীবন বীমা কর্পোরেশন ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ খাতে অধিকতোর উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিদেশগামী কর্মজীবীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনার জন্য একটি নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি বিশেষ বীমা প্রকল্প প্রণয়নের কাজ করছে।

এসব ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য অন্য বিষয়গুলো হচ্ছে-ক্ষুদ্রঋণ সেক্টরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে সনদ প্রদান করেছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আটটি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সনদ প্রদান করা হয়েছে। সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঞ্চয়স্থিতি শতকরা ২৫ ভাগ বেড়ে ২৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। যা গতবারের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে কোনোরূপ জামানত ছাড়া নামমাত্র সার্ভিস চার্জে ৯৯ লাখ ৬৭ হাজার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদান করেছে। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ২৭৭টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ৩১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে সাড়ে ৭ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ৪৭ হাজার ৫৪৮ দুস্থ পরিবারকে এককালীন অনুদান হিসেবে মোট ২৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৬৬ হাজার ৪৫০ জন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৩৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৬ হাজার ১৫৯টি কালভাট, ১৩ হাজার ৪৫০টি নলকূপ, ৬৯টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট এবং ৩ হাজার ৭৫টি গ্রাম সমিতির অফিস নির্মাণ সম্পন্ন করেছে।

বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের ৭০টি পৌরসভা ও ৯টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪০ কিলোমিটার ড্রেন, ৫৫টি পাবলিক টয়লেট, ১৪টি পৌর কমিউনিটি সেন্টার, ছয়টি বাস ও ট্রাক টার্মিনাল, ৪টি কসাইখানা, ৭২টি কাঁচাবাজার ও মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, একটি পৌর ভবন নির্মাণ, ১৩৪ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন, ৮টি গভীর নলকূপ এবং ১ হাজার ৯৭৬টি সড়কবাতি স্থাপন করেছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০০ সালে গঠিত ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ) এর নাম পরিবর্তন করে এ বিষয়ক একটি নীতিমালার আওতায় এন্টারপ্রেনারশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) করা হয়েছে। এ ফান্ড থেকে দুই শতাংশ সুদে চার বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এ ফান্ড থেকে কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও আইসিটি মিলে মোট ২ হাজার ৬৩টি প্রকল্পে ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে এ যাবৎ ৫৫ হাজার হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এমইউএইচ/এমবিআর/পিআর

আরও পড়ুন