ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিচার কম হচ্ছে : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে যেসব উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বা অভিযুক্ত অথবা দুর্নীতি করেছেন, খুব কম ক্ষেত্রেই তারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০১৮’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। এখানে আত্মতুষ্টির কোনো অবস্থা নেই। আমাদের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি দুর্নীতির কারণে আটকে আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা থাকলেও এটার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই। উচ্চ পর্যায়ের লোকদের বিচারের আওতায় আনার সেরকম উদাহরণ কম। ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারি ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি এক ধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকট। আমাদের প্রশাসনে, সরকারি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও ব্যক্তি অবস্থানকে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ও ফাইনান্স সেক্টরে দুর্নীতি স্পষ্ট। এখানে ব্যাংক জালিয়াতি, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা, রাজনৈতিক প্রভাব, সারাদেশে বিভিন্নভাবে ভূমি সেক্টরে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় ক্রয়খাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও ক্রমবর্ধমানহারে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের দৃষ্টান্ত খুবই খারাপ। আজকের গণমাধ্যমেও অর্থপাচারের দৃষ্টান্তের খবর অত্যন্ত বিব্রতকর ও নেতিবাচক। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তিনি বলেন, দুর্নীতি যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জবাবহিদিতাসহ যেসব মৌলিক উপাদান থাকা দরকার তার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। আর এর প্রভাব অপরাপর সেক্টরেও পরিলক্ষিত। আর দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা এবং স্বাধীনভাবে কাজ না করার বিষয়গুলোও ক্রমাগতভাবে দুর্বল হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) কাজে গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ও সক্রিয় রয়েছে। তবে তাদের দুর্নীতি বিরোধী যেসব অভিযান তা নিম্ন ও মধ্যম লেভেলে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের রেঞ্জ অব অপারেশন উচ্চ পর্যায়ে নেই। দুদকের কাজের ক্ষেত্রে পদে পদে জবাবদিহিতার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে। এককভাবে দুর্নীতি দমনের এ প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমন বা কমিয়ে আনতে পারবে না। এজন্য অপরাপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সক্রিয় ও স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির এই নির্বাহী পরিচালক।

আইনের শাসনের যে পরিবেশ সেখানেও ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে যাদের ভয়েস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেই নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমও শঙ্কিত। কারণ তাদের কণ্ঠস্বর রোধ করা হয়েছে জিডিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন দিয়ে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি।

তিনি বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স এর কথা বলেছেন। বলেছেন দুর্নীতিগ্রস্ত কারো এদেশে ঠাঁই হবে না। তার ওই ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি। এখন বাস্তবায়নের পালা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সংসদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। এটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, এনবিআর, অর্থনৈতিক দুর্নীতির তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

cpi

তিনি বলেন, আসামিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি দমনের বিষয়টি হতে হবে জিরো টলারেন্স। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সাধারণের স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে টিআইবির ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশ করা বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) ২০১৮-এর প্রতিবেদনে অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকার দেশ উগান্ডার পাশে নাম লেখায় বাংলাদেশ। ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ২৬ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। একইভাবে ২৬ স্কোর পেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ১৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকও। ফলে আগের বছরের তুলনায় এবার আরও ৪ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। অর্থাৎ বাংলাদেশে দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম।

২০১৫ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। ২০১৬ সালে ছিল ১৫ তম। ২০১৭ সালে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ১৭তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

আর ১৮০টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বাংলাশের অবস্থান ১৪৯তম। অথচ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ এই হিসেবে ছিল ১৪৩তম। অর্থাৎ এখানেও ৬ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের।

১৮০টি দেশের উপর টিআই এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপে ০ থেকে ১০০ নম্বরের স্কেলে দেশগুলোকে নম্বর দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম নম্বর (১০ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে (১৩ স্কোর) সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। তৃতীয় অবস্থানে (১৪ স্কোর) রয়েছে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া। ১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪৩ নম্বর অবস্থানে।

আর সবচেয়ে বেশি (৮৮ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বিবেচিত হয়েছে ডেনমার্ক। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এর পরেই রয়েছে (৮৭ স্কোর) নিউজিলন্যান্ড। তৃতীয় অবস্থানে (৮৫ স্কোর) রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুজারল্যান্ড।

প্রসঙ্গত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান (১৬ স্কোর)। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতি ভুটানে (৬৮)। এই এলাকায় দুর্নীতির দিক থেকে আফগানিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

এছাড়া স্কোর ৪১ নিয়ে ভারতের অবস্থান ৭৮ নম্বরে। পাকিস্তানের (স্কোর ৩৩) অবস্থান ১১৭, মালদ্বীপ ও নেপালের (স্কোর ৩১) অবস্থান ১২৪ এবং ৩৮ স্কোর নিয়ে ৮৯তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।

জেইউ/এমএমজেড/পিআর/এমএস

আরও পড়ুন