‘ওর কাছে ইয়াবা আছে চেক কর’
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় উত্তর বাসাবোর ভাড়া বাসা থেকে বাজার করার উদ্দেশে হয়েছিলেন শুভ্রদেব। উত্তর বাসাবোর ১০ নম্বর গলিতে মানুষের জটলা দেখে চোখ আটকে যায় তার। ১০ হাত দূরে থেকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করেন। দেখতে পান কয়েকজন পুলিশ সদস্য এক যুবকের মোটরসাইকেলের নাট-বল্টু খুলে কী যেন দেখছে। কয়েক মুহূর্ত পরেই ঘটনাস্থলে থাকা এসআই সালউদ্দিন তাকে ডাক দেন এবং তিনি কেন তাদের কর্মকাণ্ড দেখছেন সে বিষয়ে ধমক দিয়ে জানতে চান।
কোন এলাকায় থাকেন, নাম কী, কেন সেই রাস্তা ধরে হাঁটছেন? নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত হন শুভ্রদেব। শেষে ওই পুলিশ সদস্য তার কাছে ইয়াবা আছে অভিযোগ তুলে তাকে তল্লাশির জন্য নির্দেশ দেন। আরেক পুলিশ সদস্যকে দেখিয়ে বলেন, ‘এই ওর কাছে কাছে ইয়াবা আছে, ওকে চেক কর।’ হঠাৎ পুলিশের সদস্যের এমন আচরণে হতবাক হয়ে কথা না বাড়িয়ে বাসায় চলে আসেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন এলাকার উত্তর বাসাবোর ১০ নম্বর গলিতে এমন পুলিশি হেনস্তার শিকার হন দৈনিক মানবজমিনের সাংবাদিক শুভ্রদেব।
পরে বিষয়টি তিনি থানায় অভিযোগ করলে হেনস্তাকারী পুলিশ সদস্যরা অস্বীকার করেন। ঘটনাটি চেপে যাওয়ার জন্য ফোনও করেন এসআই সালউদ্দিনের সঙ্গে থাকা এসআই শংকর।
তবে ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বরাবর ওই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক শুভ্রদেব।
ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী শুভ্রদেব বলেন, ‘দুপুরে আমি রাস্তা দিয়ে বাজারের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম, দেখি ১০ হাত দূরত্বে কিছু মানুষের জটলা, তারা দাঁড়িয়ে কী যেন দেখছে। আমিও দূর থেকে বিষয়টি দেখে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। তারা কেন দাঁড়িয়ে আছে আর এত মানুষের জটলা কেন। দেখলাম চারজন পুলিশ এক যুবকের একটি মোটরসাইকেলের নাট-বল্টু খুলে সেট করছে। আমি তাকাতেই একজন পুলিশ সদস্য আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই আপনি এদিকে তাকায় আছেন কেন? আপনার এখানে কী কাজ? এদিকে আসেন, আপনার বাসা কই? দেখেন না পুলিশ কাজ করছে, পুলিশের কাজে বাধা দেন কেন? এই রাস্তা ধরে আসছেন কেন?’
‘এমন সব প্রশ্ন শুনে আমি জানতে চাই, আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমার পাল্টা প্রশ্নে তিনি বলতে লাগলেন, তো কীভাবে কথা বলব? কেন আমি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি না, এখানে কেন দাঁড়ায় আছেন। তার এমন কথা শুনে বললাম, অহ আচ্ছা- ঠিক আছে। এবার তিনি ঠিক আছে শুনেই তিনি ক্ষেপে গিয়ে সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্দেশ দিয়ে বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে মানে! এই ওর কাছে ইয়াবা আছে, ওকে চেক কর।’ তখন তারা আমার পুরো দেহ তল্লাশি শুরু করলো। কিছু না পেয়ে পরে রাস্তায় ইয়াবা খোঁজার অভিনয় শুরু করে।’
‘কিছু না পেয়ে আবার বলেন, ওই যে আমাদের দেখে নিচে ইয়াবা ফেলে দিছে। লাল দুটি ইয়াবা ফেলছে। ওই পুলিশ সদস্যরা তখন শুকনো মাটিতে ইয়াবা আছে কি না চেক করেন। কিন্তু না পেয়ে একজন পুলিশ সদস্য বলেন, চলে যান আপনি, বিপদে পড়বেন। আমি তখন বাজারের দিকে চলে যাই।’
পেছন থেকে এসআই সালাহউদ্দিন বলেন, ‘চলে যাচ্ছেন কেন? ওকে চেক করো ইয়াবা পাবা। এছাড়াও তারা নানান উগ্রকথা বলে আমাকে উপস্থিত জনতার সামনে অপমান করে। এসআই সালাহউদ্দিন ছাড়াও সেখানে আরও দুজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সবাই প্রত্যক্ষভাবে হেনস্তার সঙ্গে জড়িত।’
শুভ্রদেব বলেন, ‘বাসায় ফিরে পুরো ঘটনাটি সবুজবাগ থানার ওসিকে (তদন্ত) ফোন করে জানাই। তখন ওসি বলেন- বিষয়টি তারা বুঝতে পারেনি। আপনিও সাংবাদিক পরিচয় দেননি। এ কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। থানায় বিষয়টি জানানোর ঘণ্টাখানেক পর এসআই সালউদ্দিনের সঙ্গে থাকা আরেকজন এসআই শংকর আমাকে ফোন করেন এবং বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।’
সাংবাদিক শুভ্রদেব বলেন, ‘বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। পেশাদার সাংবাদিকের সঙ্গে যদি এই আচরণ করে পোশাকধারী পুলিশ তাহলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আরও কী হতে পারে। বিষয়টি লিখিতভাবে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
বিষয়টির ব্যাপারে মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সবুজবাগ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল আলম বলেন, ‘আসলে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। ওই পুলিশ সদস্যরা বুঝতে পারেননি তিনি একজন সাংবাদিক। তবে তারা (অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা) ইয়াবার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবুও বিষয়টি তদন্ত করা হবে।’
জেইউ/বিএ