পাঠক মান না বাড়ালে, সাহিত্যের মান বাড়ে কী করে?
সাহিত্যের মান আসলে দাড়িপাল্লা দিয়ে মেপে দেয়া যায় না। বাংলা সাহিত্যের মানোন্নয়নের জন্যই বইমেলার আয়োজন। কিন্তু সেই মানের আসলে কতটুকু উন্নয়ন ঘটল, তা ভাবনার আছে। পাঠক নিজের মান না বাড়ালে, সাহিত্যের মান বাড়ে কী করে!
বলছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। আসন্ন বইমেলা এবং সাহিত্য মানের উন্নয়ন নিয়ে কথা হয় এ লেখকের সঙ্গে।
লেখক, পাঠক এবং সাহিত্য মান বাড়ানোর জন্যই অমর একুশে বইমেলার আয়োজন। মেলা আয়োজনের এতদিনে আসলে সফলতা কী?
জবাবে হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘একুশে বইমেলাটি একেবারেই আমাদের নিজস্ব। মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার বই বের হচ্ছে। দিন যাচ্ছে, বই প্রকাশের হার বাড়ছে। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশনীগুলোর অবদান আছে। যেভাবেই বের করুক, একটি সংখ্যার মাপকাঠি সামনে আসছেই। মেলাটি উপলক্ষে গোটা রাজধানীতে এক ধরনের উৎসব বিরাজ করে। মাসব্যাপী মেলা প্রাঙ্গণে বিপুল জনসমাগম হয়ে থাকে। এসব বিবেচনায় মেলার গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। লেখক তৈরি হচ্ছে। পাঠকও আসছেন মেলাকে উপলক্ষ করেই।’
সাহিত্যমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকাশিত সব বইয়ের মান একই হবে এটি ভাবনার কোনো কারণ নেই। এত এত বইয়ের মাঝে কোনো কোনোটির মান নেমে যেতেই পারে। আর বাংলা সাহিত্যের মান নিয়ে প্রশ্ন সামনে এলে আরেকটি বিষয় আলোচনায় আনা উচিত। তা হচ্ছে বাংলা সাহিত্য অন্য ভাষায় অনুদিত হচ্ছে না। বিশেষত ইংরেজি ভাষায় প্রচুর বাংলা বই অনুদিত না হওয়ায় মানের বিষয়টি ঘাটতিতেই রয়ে যাচ্ছে।’
একই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মান নিয়ে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করতে হবে। বইমেলার আবর্তে আলোচনা করতে গেলে খাটো হয়ে যায়। একসময় যেমন কলকাতা কেন্দ্রিক ভাষা চর্চা হয়েছে, এখন এপারে ঢাকা কেন্দ্রিক হচ্ছে। কেন্দ্রীভূত চর্চায় সাহিত্যের বিকাশ হয় না। কেন আমরা গ্রামে গ্রামে পাঠক তৈরি করতে পারছি না, সেটাও একবার ভাবা দরকার। সাহিত্যের মূলে তো মানুষের রূপ। এ রূপ সর্বত্রই। একটি জায়গায় আটকে থাকলে সত্যিকার রূপায়ন ঘটে না।
‘বঙ্কিম বা রবীন্দ্র না হয় তৈরি করা যাবে না। কিন্তু মানিক বন্দোপাধ্যায় তো তৈরি হতেই পারেন। কিন্তু তাও তো হচ্ছে না। এর অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র, সমাজের সংকট সাহিত্য মানের উন্নয়নেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুঁজির পেছনে সবাই অস্থির হয়ে ছুটছে এবং রাষ্ট্রই এ অস্থিরতা তৈরি করে দিচ্ছে। এ অস্থির সময়ে সাহিত্য নিয়ে কে আর ভাববে’ প্রশ্ন লেখকের।
এএসএস/এনডিএস/পিআর