এসএসসি পরীক্ষা আমাদের জন্যও একটা পরীক্ষা : শিক্ষামন্ত্রী
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষাকে নকল ও প্রশ্নফাঁসমুক্ত করতে চান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ জন্য তিনি এ পরীক্ষাকে নিজেদের (মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী, উপমন্ত্রী) জন্যও একটি পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘পরীক্ষার আগে আপনারা কোনো ধরনের অনৈতিক পথের খোঁজে নামবেন না। আমরা চেষ্টা করব, কোনোভাবেই কোনো দুর্বৃত্ত যেন আমাদের সুন্দর প্রক্রিয়াকে নষ্ট না করে। কিন্তু প্রশ্নপত্র পাবার ব্যাপারে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের একাংশের যদি বিশাল আগ্রহ না থাকে, চেষ্টা না থাকে, তাহলে দুর্বৃত্তরা এ অপকর্ম করার চেষ্টা করবে না।’
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয় স্কুল ও মাদরাসার শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, ‘এ পরীক্ষা আমাদের জন্যও একটা পরীক্ষা। আমরা এ পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে চাই। আমরা চাই, পরীক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পড়াশোনা করবে, ঠিকভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবে এবং ভালো ফলাফল করবে। অনৈতিকতার পথে হেঁটে কখনো ভালো ফল পাওয়া যায় না।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ক্লাসে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় হওয়া নিশ্চয় জরুরি, জিপিএ-৫ পাওয়া নিশ্চয় জরুরি। কিন্তু সেটি একমাত্র বিবেচনার বিষয় হতে পারে না। আমি ভালো মানুষ হলাম কি-না, আমার মধ্যে মানবিকতাবোধ, নৈতিকতাবোধ আছে কি-না, আমি একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলাম কি-না, আমি সুস্থ, সুন্দর মন নিয়ে বড় হচ্ছি কি-না, সেটি খুব জরুরি।’
‘গত এক দশকে আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক অর্জন দেখেছি। এর পাশপাশি আমরা এখন শিক্ষার মান উন্নত করতে মনোযোগী হয়েছি। এটা আমাদের অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে। আমরা এই শিশু-কিশোরদের জন্য একটি স্বপ্নের জগত তৈরি করে দিতে চাই। তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে, বিশ্বনাগরিক হবে। তারা এই বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে,’-বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই পড়াশোনা করবে। পড়ালেখা করলে পাস-ফেল থাকবে, প্রথম-দ্বিতীয় থাকবে। চলো, আমরা ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও শিখি। আমাদের গুণীজনদের থেকে, ইতিহাস থেকে যেন শিখি। তোমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের ইতিহাস, স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, করিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাবিভাগের সচিব মো. আলমগীর, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম।
জাতীয় স্কুল ও মাদরাসার শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মোট ৩৫টি ইভেন্টে অ্যাথলেটিক্স, হকি, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাটমিন্টন, টেবিল টেনিস ইভেন্টে মোট ৮০৮ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নিচ্ছে। গত ২ জানুয়ারি সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একযোগে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল, অঞ্চল পর্যায়ে অংশ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগীরা জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ‘বকুল অঞ্চল’, বরিশাল, খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘গোলাপ অঞ্চল’, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘পদ্ম অঞ্চল’ ও রাজশাহী, রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘চাঁপা অঞ্চলের’ হয়ে অংশ নিচ্ছে।
চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রশিক্ষণ মাঠে ভলিবল, জিমনেসিয়ামে ব্যাডমিন্টন, সেন্ট প্লাসিডস হাই স্কুল মাঠে বাস্কেটবল, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ক্রিকেট ও দামপাড়া পুলিশ লাইন্স মাঠে অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠান হবে।
আবু আজাদ/জেডএ/এমকেএইচ/এসজি