বিআরটিসির দুর্নীতিবাজদের তাড়াতে বললেন ওবায়দুল কাদের
রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সরিষার মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে। যাত্রার শুরুতে প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে হবে। কোনো আপোষ করা চলবে না। করাপ্ট (দুর্নীতিবাজ) অফিসারদের বাদ দিয়ে দিতে হবে। যারা দুর্নীতির সঙ্গে বিআরটিসিকে সমার্থক করে ফেলেছেন তাদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নাই।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে বিআরটিসি ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘বিআরটিসির চলমান এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিসিতে দুর্নীতি বাসা বেঁধে আছে। যারা কাজ করেন না তাদের বলছি, কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে দেশের প্রতি ভালোবাসা আছে- এটা ভাবার কারণ নাই। নিজেদের পকেটের উন্নয়ন নয়, বিআরটিসির উন্নয়নে কাজ করুন।’
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে বিআরটিসির বাস। ট্রাকগুলো ভালো, প্রফিট দিচ্ছে। কিন্তু যাত্রীবাহী বাসের অবস্থা খারাপ। এর কারণ জানতে চান সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সঠিক ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব না পড়লে বিআরটিসি আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের বিআরটিসি লসে চলছে। অথচ আমাদের অনেক গাড়ি লিজে দেয়া রয়েছে। লিজে গাড়ি দিয়ে রেখেছি আর লসে থাকবে বিআরটিসি তা মানা যায় না।’
লিজ দেয়া বিআরটিসির গাড়ির তালিকা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘লিজ দেব কিন্তু গাড়ি লোকসান কেন হচ্ছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। সরিষার মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে। যাত্রার শুরুতে প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে হবে। কোনো আপোষ করা চলবে না। করাপ্ট অফিসারদের বাদ দিয়ে দিতে হবে।’
কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি আনার কোনো উপকারিতা নেই বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এর আগে দেখা গেছে কোটি কোটি ডলার খরচা করে বিদেশ থেকে গাড়ি এনে কোনো উপকার নাই। সাময়িক একটা স্বস্তি দেয়া যাবে। কিন্তু কিছুদিন পরেই তা আবার আগের মতো। এবার আমদানি করা ১১শ’ গাড়ির পরিণতি যেন এর আগে আমদানি করা গাড়িগুলোর মতো না হয়। এ ব্যাপারে কঠোর ও কঠিনতর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জনবলের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘জনবল বাড়াতে হবে। জনবল বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে আমাকে বলুন, আমি সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। কিন্তু জনবল এই অবস্থায় রেখে বিআরটিসির অগ্রযাত্রা সুখকর হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে আবারো বলছি-নিজেরা বসুন, টিমওয়ার্ক গড়ে তুলুন। নতুন জনবলের জন্য যথা জায়গায় আবেদন করুন। আমাকে জানান, ব্যবস্থা নেব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য টার্গেট নিয়ে আজকে নতুন যাত্রা শুরু হলো। বিআরটিসিতে কেন বারবার লোকসান হবে। এটাকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, কোথায় বাধা, কোথায় অন্তরায়-সব অন্তরায় দূর করতে হবে।’
‘ড্রাইভার শ্রেণিকে গুরুত্ব দিতে হবে। দায়সারা ট্রেনিং করালেই হবে না। ট্রেনিং কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। যাতে তারা দক্ষ ও সুশৃঙ্খল জনবল হিসেবে, চালক হিসেবে নিয়োগ পায় সেটা দেখতে হবে।’
‘আমাদের বেশ কিছু গাড়ি গাজীপুরে এসে গেছে। আরও কিছু সীমান্তে আগামীকালের মধ্যে চলে আসবে এবং আগামী এপ্রিলের মধ্যে আমরা আশা করছি, ইন্ডিয়ার লাইন অব ক্রেডিট এর আওতায় ১১০০ গাড়ি (৬শ’ যাত্রবাহী ও ৫শ’ মালবাহী ট্রাক) পেয়ে যাব। তখন বিআরটিসি অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। এই সুযোগকে কাজে লাগানো জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে হবে’-যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
জেইউ/এসআর/এমকেএইচ