তোপের মুখে বিমানের এমডি
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর তোপের মুখে পড়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ। রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলান্সের প্রধান কার্যালয় বলাকা পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী ভাড়া নেয়া ইজিপ্ট এয়ারের নষ্ট দু'টি এয়ারক্র্যাফটের বিপরীতে মাসে ১০ কোটি টাকা গচ্ছা দেয়ার বিষয়ে জানতে চান। কী কারণে বা কার স্বার্থে বছরে ১২০ কোটি টাকা গচ্ছা দেওয়া হচ্ছে প্রতিমন্ত্রীর এমন প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে! অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিমান সচিব মহিবুল হক। প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব আগামী তিন মাসের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়ে মিসর থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ভাড়ায় আনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমান বহরে যোগ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই একটি এয়ারক্র্যাফট বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ভিয়েতনামের একটি বিমানবন্দরে পড়ে আছে সেটি। মেরামতের অর্থ জোগান না দিতে পারায় এয়ারক্র্যাফটিকে ফেলে রাখা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে অকেজো এয়ারক্র্যাফটিকে গ্রাউন্ডেড করে মাসে ১০ কোটি টাকা করে ভাড়া প্রদান করে আসছে বিমান।
বিমান পরিচালনা পর্ষদের অবিশ্বাস্য নীরবতার কারণে দু’টি উড়োজাহাজের জন্য বিমানকে প্রতিমাসে ভাড়া গুণতে হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ইজিপ্ট এয়ার থেকে ৫ বছরের জন্য এ দু'টি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ওই সময় বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন জামাল উদ্দিন আহমেদ। উড়োজাহাজ দু’টি আনতে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে জামাল উদ্দিন আহমেদ, ফ্লাইট অপারেশন পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত, ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল, প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরীসহ বিশাল বহর নিয়ে মিসরে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী প্রায় এক মাস মিসরে অবস্থান করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিমানের ইতিহাসে একসঙ্গে এতো টাকা অগ্রিম দিয়ে উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়া খুবই নজিরবিহীন ও রহস্যজনক। ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল চক্রই এ উড়োজাহাজ আনতে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছে বিমানের একটি সূত্র।
এ বিষয়ে বিমানের এমডি মোসাদ্দিক আহমেদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ওয়াহিদুল আলম এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, কোনো প্রকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই স্বল্প আয়ুর এয়ারক্র্যাফট দু’টি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। পাঁচ বছরে লিজ দাতা কোম্পানিকে যে পরিমাণ টাকা দিতে হবে তার চেয়ে স্বল্প মূল্যে এর চেয়ে কম বয়সী উড়োজাহাজ কেনা সম্ভব ছিল।
জানা যায়, ইজিপ্ট এয়ারের ব্যবসায় ধস নামায় নিজেদের আর্থিক দুর্গতি থেকে উদ্ধার পেতে বিমান বাংলাদেশকে দু’টি পুরোনো উড়োজাহাজ গছিয়ে দিয়েছে তারা। আর বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এসব কিছু আমলে না নিয়ে কমিশন বাণিজ্যেই ছিল অধিক মনযোগী।
আরএম/এসএইচএস/জেআইএম/এসজি