ভারত থেকে হলি আর্টিসানে হামলার ৩৯ লাখ টাকা-অস্ত্র পাঠান রিপন
২০০৯ সালে বগুড়ার নন্দিগ্রাম ছেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিসে ভর্তি হন। সেখান থেকে দাওয়া-ই হাদিস পাস করে জেএমবির একাংশের আমির ডা. নজরুলের হাত ধরে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। শুরুর দিকে তার দায়িত্ব ছিল ইয়ানতের (চাঁদা) টাকা সংগ্রহ করা। পরবর্তীতে পুরো জেএমবির অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পান তিনি।
হলি আর্টিসানে হামলার আগে পার্শ্ববর্তী দেশে (ভারত) আত্মগোপন করেছিলেন রিপন। সেখান থেকেই হলি আর্টিসানে হামলার জন্য ৩৯ লাখ টাকা পাঠান। শুধু তাই নয়, হামলায় ব্যবহৃত অর্থ, অস্ত্র ও গোলাবারুদও সরবরাহ করেছিলেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দেশে ফিরে ‘দুর্বল জেএমবি’কে সক্রিয় করার চেষ্টায় ছিলেন।
গতকাল শনিবার রাতে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল ওরফে রেজাউল করিম ওরফে আবু মুজাহিরকে আটক করেছে র্যাব।
র্যাবের দাবি, রিপন হলি আর্টিসান মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি এবং অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী। এ সময় তার কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বগুড়ার নন্দীগ্রামের শেখের মাড়িয়ার মৃত নাছিরউদ্দিনের ছেলে রিপন পড়াশোনা করেছেন ঢাকার মিরপুরে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নওগাঁর বিভিন্ন মাদরাসায়।
২০০৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদরাসাতুল দারুল হাদিস থেকে দাওরা-ই হাদিস শেষ করে বগুড়ার সাইবার টেক নামক একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোর্স সম্পন্ন করে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
২০১৩ সালে পূর্ব পরিচিত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। প্রাথমিকভাবে রিপনের দায়িত্ব ছিল ইয়ানত (চাঁদা) সংগ্রহ। সেই টাকা তৎকালীন জেএমবি’র একাংশের আমির ডা. নজরুলের কাছে টাকা পৌঁছে দিতেন।
জেএমবির সারোয়ার জাহান গ্রুপের পুরো জেএমবি’র অর্থ ও সদস্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব পান রিপন। এরই অংশ হিসেবে রিপন বিকাশের দোকান লুঠ করে ৬ লাখ টাকা, সিগারেট বিক্রেতা হতে ছিনতাই করে ১ লাখ টাকা এবং গাইবান্ধায় অপর এক ঘটনায় ১ লাখ টাকাসহ মোট ৮ লাখ টাকা ছিনতাই করে জেএমবি আমির সারোয়ার জাহান এর কাছে পৌঁছে দেন। ওই সময়ই জেএমবির আমির সারোয়ার জাহানের মাধ্যমে জঙ্গিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা জঙ্গি আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
জেএমবিতে তামিম চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে রিপন জানায়, ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে তামিম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহানের গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে স্মারকপত্র প্রস্তুত করা হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে সারোয়ার জাহানকে আমির নির্বাচিত করা হয় এবং সাংগঠনিক নাম দেয়া হয় ‘শায়েখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ’। ওই বৈঠকে সাদ্দাম ওরফে কামাল, শরিফুল ওরফে রাহাতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রিপনসহ আরও কয়েকজন। ওই বৈঠকে রিপন জেএমবির সুরা সদস্য হিসেবে নিয়োজিত হন। তার দায়িত্ব ছিল অর্থ সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরণ সরবরাহ করা।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধাতে এক বৈঠকে হলি আর্টিসানে হামলার সিদ্ধান্ত হয়। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হামলার আগে এপ্রিল মাসে রিপন পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যান। সেখান থেকে হামলার আগে রিপন আনুমানিক ৩৯ লাখ টাকা সারোয়ার জাহানকে পাঠান। হলি আর্টিসানে ব্যবহৃত তিনটি একে ২২ রাইফেল, পিস্তলসহ বিস্ফোরকগুলো কল্যাণপুরে পাঠায়। মারজানের মাধ্যমে এরপর সেগুলো সারোয়ার জাহানের কাছে পৌঁছান।
এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রিপন ছিলেন এবং সেসব ঘটনা রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল।
মুফতি মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন জঙ্গি হামলাগুলো পরিচালনার আগে মহড়া করা হতো। ২০১৬ সালে এপ্রিলে একটি মহড়া চলাকালীন সময়ে বগুড়ায় বিস্ফোরণে সুরা সদস্য ফারদিন ও অপর এক সক্রিয় জঙ্গি সদস্য তারিকুল ইসলাম নিহত হয়।
তিনি বলেন, হলি আর্টিসান পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিরা নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েন। তখন আত্মগোপনে থেকে রিপন পুনরায় জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এ উদ্দেশ্যে সে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে জঙ্গিদের সংগঠিত করতে থাকে।
নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ম্পর্শকাতর স্থানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এটা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা সংগঠনের সদস্যদের উজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছিল। যেহেতু এখন হলি আর্টিসান মামলা চলমান রয়েছে সেহেতু এরই মধ্যে আবারও একটি ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল রিপনের।
জেইউ/জেএইচ/জেআইএম/এসজি