রেস্টুরেন্টে হঠাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
গুলশান-১ ও ২ নম্বরের মাঝামাঝি ১২৩ নম্বর রোডের ২২ নম্বর বাড়ি। এটি আসলে বাড়ি নয়, একটি রেস্টুরেন্ট। নাম কোরিয়ানা রেস্টুরেন্ট। বুধবার বেলা ২টা। রেস্টুরেন্টটিতে ভোজন রসিকদের ভিড়। সবাই সেখানে বসে খাচ্ছেন কোরিয়ান ফুড। হঠাৎ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ঢুকে পড়লো রেস্টুরেন্টটির পার্কিংয়ে।
এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি চলে গেলেন রেস্টুরেন্টটির খাবার তৈরির স্থান ও স্টোররুমে। ভেতরে ঢুকতেই ফ্রিজিং করে রাখা সব খাবার ঢাকনাাবাহীন। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিতেই তারিখ উল্লেখ ছিল না। বিভিন্ন ধরনের মাংস, মাছ, অক্টোপাসসহ সবজি দিয়ে কোরিয়ান ফুড তৈরির জন্য রাখা কাঁচা উপাদান দীর্ঘদিনের পুরনো ছিল। সেই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং খাবার তৈরিকারকদের শারীরিক পরীক্ষাপত্র দেখাতে পারেনি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।
এবার রেস্টুরেন্টটির দায়িত্বে থাকা সোহেল রানাকে ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে বললেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার। দেখা গেল ট্রেড লাইসেন্সও যথাযত নয়, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে রেস্টুরেন্টটি। সব মিলিয়ে রেস্টুরেন্টটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমাণা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িবহর রওনা হলো অন্যদিকে। লক্ষ্য কোথায় তা কেউ জানে না। গাড়িবহর গিয়ে থামলো গুলশান-২ নম্বরের ১০১ নম্বর সড়কের ৮ নম্বর বাসায়। এটাও একটা রেস্টুরেন্ট। নাম ফো-১০১। এটি জাপানিজ ফুডের রেস্টুরেট। এবার সরাসরি কিচেন আর স্টোররুমে গিয়ে তল্লাশি। ফ্রিজগুলো থেকে বের করা হলো পুরনো এবং তারিখহীন ফ্রোজেন সব খাদ্য উপকরণ, পুরনো পোড়া তেল এবং কিচেনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এর চেয়েও বড় অপরাধ ধরা পড়লো ট্রেড লাইসেন্স দেখার সময়। দেখা গেল অন্য ঠিকানা দেখিয়ে আবাসিক এ এলাকায় দিব্যি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।
এবার জরিমানার পালা। রেস্টুরেন্টটির দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেন এবার মুখোমুখি ভ্রাম্যমাণ আদালতের। সব অবরাধ বিবেচনা করে ফো-১০১ রেস্টুরেন্টটিকে জরিমানা করা হলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অনাদায়ে এক মাসের জেল। তাৎক্ষণিক জরিমানার টাকা দিতে না পারায় রেস্টুরেন্টটির দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেনকে আটক করে গাড়িতে তুললেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে ভেজালবিরোধী অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমদাদুল হকসহ অন্য কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এএস/এনডিএস/এমকেএইচ