ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভূমি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে টিআইবির ১২ দফা সুপারিশ

প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৫

ভূমি খাতে বিরাজমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করে তা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে রোববার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রম : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপনকালে এই আহ্বান জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বিগত পাঁচ বছরে ভূমি খাতে সরকারের একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ম্যানুয়াল ভূমি জরিপের পরিবর্তে ডিজিটাল ভূমি জরিপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ; ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠায় গৃহীত পাইলট প্রকল্প গ্রহণ যার আওতায় ৭টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান ও নামজারির খতিয়ান ডিজিটাইজেশনের কাজ চলমান; খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ ডাটাবেজে সংরক্ষণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে অনলাইনে উপস্থাপন; অনলাইনে খতিয়ানের নকল উত্তোলনের আবেদন ও নামজারির আবেদন গ্রহণ এবং মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাকে নামজারির অবস্থা অবহিতকরণ; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৩টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৬৯ হাজার ৫৯১ একর কৃষি খাস জমি বরাদ্দ; এবং চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ১৮৫টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার একর খাস জমি বরাদ্দ ইত্যাদি। তবে এসকল উদ্যোগ সত্ত্বেও ভূমি খাতে এখনও সুশাসনের ব্যাপক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে।

ভূমি খাতে বিরাজমান ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ভূমি জরিপের সময় জরিপকর্মীরা জমির পরিমাণ কম দেখানো ও খতিয়ানে ভুল তথ্য লেখার ভয় দেখিয়ে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ; ঘুষের বিনিময়ে খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত ও কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর সম্পত্তি দখলকারী ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড প্রস্তুত; তহশিল অফিস কর্তৃক ঘুষের বিনিময়ে নামজারির প্যাকেজ নির্ধারণ; কোনো কোনো ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ দখলকৃত খাসজমি, কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর এবং অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের নামে নামজারি; কৃষি খাস জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রভাব ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা ধরনের দুর্নীতি’র অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে ভূমি উন্নয়ন করের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১০,০০০ টাকা; নামজারির ক্ষেত্রে ৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা; রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা; এবং হাট-বাজার ইজারার ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদান প্রদানের তথ্য উল্লেখ করা হয়। জমির ধরণ ও স্থানভেদে ঘুষের পরিমাণ নির্ভর করে।

টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদনে ভূমি খাতে বিদ্যমান আইনি সীমাবদ্ধতা, ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের ঘাটতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রমে দুর্বল আনুভূমিক জবাবদিহিতা, ভূমি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলি ও স্বল্পকালীন পদায়ন, মাঠ পর্যায়ের ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমি ব্যবস্থাপনার বাইরে বিবিধ দায়িত্ব পালন, সহকারি কমিশনারদের (ভূমি) পেশাগত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঘাটতি, অপর্যাপ্ত মাঠ পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ, মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিবেদন সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না হওয়াসহ ভূমিখাতে বিরাজমান বিবিধ সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে ভূমি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনটি মূল সুপারিশ পেশ করা হয় যেগুলো হল : ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি সংক্রান্ত সকল প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো পরিচালনার জন্য একটি একক অধিদফতর গড়ে তুলতে হবে; ডিজিটালাইজেশনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সামগ্রিক ভূমি ব্যবস্থাপনা, রেজিস্ট্রেশন ও জরিপ ব্যবস্থায় সমন্বয় আনা।

টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায় এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা গবেষণার সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপনির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

উল্লেখ্য, অক্টোবর ২০১৪ থেকে জুলাই ২০১৫ মেয়াদে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

এইচএস/এসএইচএস/আরআইপি