মালিবাগের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
বাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর মালিবাগের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় দুই নারী গার্মেন্ট শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠলে উত্তাল হয় মালিবাগ।
পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বেলা ২টা থেকে আড়াইটার দিকে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হন। পরে আবেগাপ্লুত হয়ে পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন। তারা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। আমরা খুবই সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আমরা তাদের অনেক বুঝিয়েছি যে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনব। কিন্তু পোশাক শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে যানবাহন ভাঙচুর করেন। দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল আহত হন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। যানবাহন চলাচল করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যথেষ্ট সহনশীল ছিলাম।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১০টির বেশি বাসে ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে একটি স্বাধীন, দুটি সুপ্রভাত, একটি তুরাগ ও একটি তরঙ্গ প্লাস, একটি নূরে মক্কা পরিবহন, একটি আকাশ সুপ্রভাত, দুটি রাইদা ও প্রচেষ্টা পরিবহনের বাস রয়েছে। এ সময় প্রচেষ্টা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বাসটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুলিশের শতাধিক সদস্যকে আবুল হোটেলের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়। মালিবাগ থেকে রামপুরা পর্যন্ত রিকশা ও সিএনজি সীমিতভাবে চলাচল করছিল।
ঘটনাস্থলে পুলিশের আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার (সাঁজোয়া যান) আনা হয়। পুলিশ তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে।
মঙ্গলবারের এ দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকরা হলেন নাহিদ পারভীন পলি ও ১৩ বছর বয়সী মিম। তাদের বাসা মালিবাগ পদ্মা সিনেমা হলের বিপরীতে। তারা এমএইচ গার্মেন্টে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
বেলা দেড়টায় মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেলের মাঝামাঝি জায়গায় এ ঘটনা ঘটে। প্রথমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলি মারা যায়। পরবর্তীতে মিমের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
নিহত পলির বাড়ি নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলায়। তিনি মগবাজার পূর্ব নয়াটোলায় একটি রুমে ভাড়া থাকতেন। তার সঙ্গেই থাকতেন মিম।
তার সহকর্মী সুমি সাংবাদিকদের জানান, গার্মেন্টের কোয়ালিটি বিভাগে কাজ করতেন পলি ও মিম। দুপুরে খাওয়ার জন্য কর্মস্থল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা পারাপারের সময় সুপ্রভাত নামে বাসের ধাক্কায় মারা যান তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিক বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। তখন পূর্বহাজীপাড়ার দু’পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে শ্রমিকরা কয়েকটি গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে ও ভাঙচুর করে। এরপর ক্রমেই তারা বেপরোয়া হতে শুরু করে।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মোহাম্মদ ফজলুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি সদরঘাট থেকে গাজীপুর যাচ্ছিল।
বাসটি জব্দ ও চালককে আটক করা হয়েছে।
এআর/জেডএ/এমএস