ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আ. লীগের জয়, বিএনপির পরাজয়ের ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৯:৪২ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় এবং বিএনপির পরাজয়ের ব্যাখ্যা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ ব্যাখ্যা দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভালো কাজ করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের কারণে দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।’

সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাঙ্কুয়েট হলে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম এবং গওহর রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনার মতে, বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শোচনীয় পরাজয়ের কারণগুলো হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সাতটি আসন পেয়েছে তাদের নিজেদের কারণে। নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের প্রধান কে হবে তা তারা দেখাতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আপনারা দেখবেন, কংগ্রেসও গত নির্বাচনের আগে দেখাতে পারেনি তাদের প্রধান কে হবেন? তারা মানুষকে ওইভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্টের ক্ষেত্রেও তাই-ই হযেছে।

‘বিএনপি তাদের জোটে মানবতাবিরোধীদের নমিনেশন দিয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই দলের ২৫ জনকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিয়েছে, এজন্য তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া বিএনপির মূল লিডাররা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত এবং আদালতের রায়ে অভিযুক্ত। তাদের একজন কারাগারে ও অন্যজন পলাতক। সুতরাং তাদের মূল নেতৃত্বের অভাব ছিল। পরাজয়ের এটিও একটি কারণ,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ মেরেছে, গাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।’

বিএনপির এত কম আসন পাওয়া প্রসঙ্গে বিদেশি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। যারা নির্বাচনে পাস করার মতো ক্যানডিডেট তাদের মনোনয়ন না দিয়ে টাকা নিয়ে অন্যদের মনোনয়ন দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘ধামরাইয়ে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা জিয়াউর রহমান, নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার ও সিলেটের ইনাম আহমেদ চৌধুরীর মতো জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে এমন কিছু নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে; যাদের এলাকার মানুষ চেনে না। এমনিভাবে সারাদেশের কোনো কোনো স্থানে তিন চারজনও ছিল তাদের প্রার্থী। প্রকৃত পক্ষে কে নির্বাচন করতে পারবে সেটাই তাদের অনেক প্রার্থী বুঝে উঠতেই পারেনি। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিএনপির প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে প্রচার-প্রচারণার সময়ও পাননি। এ ছাড়াও তাদের আরও অনেক দুর্বলতা ছিল। যে কারণে ঐক্যফ্রন্টের এমন ভরাডুবি হয়েছে।’

আপনার এ বিপুল বিজয়ের পেছনের ম্যাজিকটা কী? বিদেশি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ম্যাজিক কিছুই না। দেশের জনগণের কথা বিবেচনা করে দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে সে জন্য কাজ করেছি। গত ১০ বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষিতের হার বেড়েছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে ডিগ্রি পর্যন্ত মেয়েদের পড়াশোনা ফ্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া শিশুকে যাতে স্কুলে পাঠায় সে জন্য মায়ের মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানো হয়। বিনা পয়সায় প্রতি বছর প্রায় ৩৬ কোটি বই বিতরণ করায় শিক্ষার হার বেড়েছে। যুবকদের জন্য চাকরির ব্যবস্থাসহ ট্রেনিং দিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করার কারণে চাকরির সুযোগ বেড়েছে। এ ছাড়া মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে, ইত্যাদি কারণে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আমরা নারীর ক্ষমতায়ন করেছি, কৃষকরা যাতে ভালোভাবে ফসল ফলাতে পারে সে জন্য ঋণ দিচ্ছি, সার ওষুধে ভর্তুকি দিচ্ছি। দেশের প্রতিটি বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করেছি। মেয়েরা লেখাপড়ায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৩০০০ টাকা আমরা তা ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করেছি। অন্যান্য পেশাজীবীদের মজুরি বেড়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন একবারে ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি, যা পৃথিবীর কোনো দেশে সম্ভব হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরির ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি, যেখানে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাণিজ্য করবে বাংলাদেশের সোয়া কোটি মানুষের চাকরি হবে। এভাবে আমাদের সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করছে এবং করবে। মানুষ সরকারের ওপর খুব খুশি। যে কারণে মেজরিটি আসন পেয়েছি।’

এ ছাড়া মতবিনিময়কালে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা জটিলতা, সক্রিয় বিরোধী দলের অভাব ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদক বলেন, ‘এবার বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। ভিসা জটিলতায় অনেকেই আসতে পারেননি।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের অনেকেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই তাদের আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়নি। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আনফ্রেলের নির্বাচন পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।’

আলজাজিরার ওই সাংবাদিক আবারও প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্যে সহিংসতা হয়ে আসছে। আপনি কি সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনবেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি অতীতের নির্বাচনগুলোর ইতিহাস দেখলে জানতে পারবেন, ২০০১ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট বিএনপি-জামায়াত কীভাবে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছিল। আমাদের এ বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আমরা তেমনটা করি না। ক্ষমতাসীন দল কিংবা বিরোধী দল স্বাধীন। বিরোধী দল নির্বাচনে জিততেই পারে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের কোনোরকম হয়রানি করেননি। বরং বিরোধী দলের হামলায় আমাদের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আমি তাদের নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছি, সংলাপ করেছি। আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি, যেন তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। আমরা তাদের ওপর চড়াও হতে চাই না। আমরা দেশের উন্নতি চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই রাজনৈতিক চর্চা করবে। কিন্তু আমরা সহিংসতা ও পেট্রলবোমার রাজনীতি সমর্থন করব না।’

আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংসদে সক্রিয় বিরোধীদল না থাকায় কি আপনি চিন্তিত? আপনি কি শঙ্কিত যে, আরও সহিংসতা হতে পারে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সহিংসতা ঠেকাতে যেকোনো পদক্ষেপ নেব।’

আরেক সাংবাদিদের প্রশ্ন করেন, আমাদের ইন্টারনেট অনেক প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচনের সময় আমরা প্রযুক্তিগত সেই সুবিধা পাইনি। নির্বাচনে ইন্টারনেট গতি কেন কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেট বেশি ব্যবহারের কারণে গতি কমে গিয়েছিল।’

রয়টার্সের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র বলেছেন, অনেক স্থানেই ভোট বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কি আশা করতে পারি, নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকার এ ঘটনার তদন্ত করবে? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই তারা করতে পারে। অতীতেও এমন তদন্ত করেছে তারা। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা।’

রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। একইসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে যেন তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা অনুরোধ করব, তারা যেন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’

এফএইচএস/এনডিএস/এমএস

আরও পড়ুন