আইনগতভাবে জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই
নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থিতা অনুমোদনসহ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, সেহেতু এ পর্যায়ে এসে আইনগতভাবে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার (২৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, আজকে নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে দুটি আলোচ্যসূচি ছিল- প্রথমটি- ব্যালট পেপার মুদ্রণসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক অগ্রগতি, দ্বিতীয়টি- হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশন ১৬২৩৭/২০১৮ বিষয়ে আদালতের রুল। এ ছাড়া তৃতীয় আলোচ্যসূচিতে ছিল বিবিধ বিষয়। এই বিবিধ আলোচ্যসূচিতে আদালতের আদেশে বিএনপির প্রার্থীশূন্য হওয়া আসনে দলটির বিকল্প প্রার্থী মনোনয়ন বা বর্তমান তফসিল স্থগিত করে পুনঃতফসিলের আবেদনের বিষয়টিও আলোচনা হয়।
ইসি সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে যে কয়েকটি এজেন্ডা ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল রিট পিটিশন ১৬ হাজার ২৩৭ নিষ্পত্তি। এই রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্ট বিভাগে বাতিল হওয়ায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করেন। একই সাথে রিট পিটিশন (১৬২৩৭) দায়ের করেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ আদেশের কপি প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে মামলার পিটিশনাল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী ও অন্যান্য কর্তৃক দাখিলী আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য মামলার এক নম্বর প্রতিপক্ষ নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা প্রদান করেন। আজ সেই দাখিলী আবেদনটি পর্যালোচনা করেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায় রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর রিট আবেদনে বর্ণিত ২৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে চূড়ান্ত করেন। রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল দায়ের করা হয়নি। ইতোমধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রিটার্নিং অফিসার উল্লেখিত ২৫ জনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে প্রতীকও বরাদ্দ করেছে। এমতাবস্থায় তাদের প্রার্থিতা বাতিলের আইনগত কোনো সুযোগ নির্বাচন কমিশনের নেই মর্মে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের এই পর্যায়ে এসে জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই। আদালতে কোনো সুযোগ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, স্বাভাবিকভাবে জামায়াতে ইসলাম কোনো নিবন্ধিত দল নয়। তারা যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে অর্থাৎ অন্য দলের প্রতীকে অংশ নিয়েছে। সেটি নির্বাচন কমিশন পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, এই পর্যায়ে এসে তাদের মনোনয়ন বা প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই।
এই ২৫ জনকে কমিশন কোন দলের প্রার্থী হিসেবে দেখছে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, যেহেতু তারা ধানের শীষের প্রতীকই গ্রহণ করে নির্বাচন করছে সুতরাং নির্বাচন কমিশন মনে করে তারা ধানের শীষেরই প্রার্থী। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল তিন কার্যদিবসের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত জানানো ও রিট আবেদন নিষ্পত্তি করা। আমরা আগামীকালই (সোমবার) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগকে জানাবো।
প্রসঙ্গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী একটি রিট দায়ের করেন। রিটটির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। গত সোমবার ও মঙ্গলবার রিটের শুনানি হয়। রিটে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ ২৫ প্রার্থীকে বিবাদী করা হয়।
১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রিট শুনানি শেষে রুল জারি করে আদেশ দেন। আদেশে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ চারজনের আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থিতার বিষয়ে আমরা হাইকোর্টের চিঠি পেয়েছি। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে (রবি/সোমবার) মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গৌরব একাত্তরসহ কয়েকটি সংগঠন নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘তারা শুধু ধানের শীষের প্রতীক নয়, তারা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছেন তারা। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ তাদের দেয়া হয়েছে। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি। বিএনপি মনোনীত করেছে।’
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াতের নেতাদের পদ-পদবি তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়েবসাইটে পদ-পদবি থাকুক। আপনারাও যদি আমাদের কাছে মনোনয়ন চান, আমরা দিতে পারি। কোনো ওয়েবসাইটে আপনার নাম কীভাবে আছে সেটা পরের ব্যাপার। আমরা আইনের মাধ্যমে দিতে পারি কি-না সেটা হলো বিষয়।’
জামায়াত প্রার্থীরা হলেন দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
উল্লেখ্য, পুনঃনির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।
এইচএস/জেইউ/এসএইচএস/আরআইপি