ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এখনো বিকট শব্দে আঁতকে ওঠেন রুমা

প্রকাশিত: ০২:৪০ এএম, ২১ আগস্ট ২০১৫

রাতে ঘুমাতে পারি না। চারটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েও ঘুম আসে না। রাতে চিৎকার করে কান্না করে উঠি। সেই শব্দ। সেই ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকি। সেই ভয়ংকর শব্দ এখনো কান থেকে যায় না। মাথায় শব্দ ভর করে আছে। কঠিন যন্ত্রণা আমরা ভোগ করছি। আমাদের কি অপরাধ ছিল? অপরাধ ছিল একটাই আওয়ামী লীগ করি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১১ বছর। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অন্যান্যদের সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন তৎকালীন ৬৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন রাশিদা আক্তার রুমা।

রাজধানীর ৫৯ জমিদার গলির, চাংখারপুলের নিজ বাসায় বসে জাগো নিউজের কাছে এভাবেই নিজের ভয়াল স্মৃতিচারণ করছিলেন রুমা। যিনি শরীরে গ্রেনেডের হাজার স্প্রিন্টার নিয়ে প্রত্যেকটা দিন লড়াই করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর মহিলা লীগের প্রচার সম্পাদক।

তিনি বলেন, সেই দিন ওই ২১ আগস্ট ঢাকার মেয়র হানিফের নের্তৃত্বে মিছিল নিয়ে সাঈদ খোকনের সঙ্গে সমাবেশ স্থলে যাই। সমাবেশ শেষে গণমিছিল বের করার কথা ছিল। আমি ৬৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে যাই।

সমাবেশ স্থলে ট্রাকের পশ্চিম পার্শ্বে আইভী আন্টির সঙ্গে ছিলাম। একটা ছেলেকে দেখে আন্টিকে বললাম ছেলেটি মহিলাদের দিকে কেন? তিনি ছেলেটিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।

এ ঘটনার দু মিনিট পরেই আপা (নেত্রী শেখ হাসিনা) নামবেন এ সময় আইভী আপা জয় বাংলা শ্লোগান দিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দ।

আমি আর কিছু বলতে পারি না। উড়ে গিয়ে পড়ে যাই। পড়ে শুনতে পাই হইচই। জ্ঞান ফেরার পর শুনি কান্নাকাটি। ট্রাক খালি দেখতে পাই। আমি নিচে পড়ে আছি। আইভী আন্টি বসে আছেন। আমি পানি পানি করে চিৎকার শুরু করি। পরে কয়েকজন মিলে আমায় ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যান বলে শুনেছি।

শরীরের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢামেক থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল সিকদার, পঙ্গু, ইন্ডিয়া। এভাবে চিকিৎসার জন্য আমার শরীরে ১৭ বার অপারেশন করা হয়।

সর্বশেষ সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ২৮ তারিখে বাসায় ফিরেছি। সেখান থেকে ডাক্তাররা বলেছেন, একটা কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কান থেকে ব্লাড যাচ্ছে চোখে। চিকিৎসা না করালে দুটো চোখই নষ্ট হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে গেছে।

আমার সমস্ত শরীরে ১০০০ স্প্রিন্টার রয়েছে। কিভাবে যে বোঝাবো কতো কষ্টে আছি। গরমের দিনে বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। ঘরেই কাটাতে হয়।

কথা বলতে বলতে এক সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রুমা। বলেন- ‘কি অপরাধ ছিল আমাদের? সুস্থ মানুষগুলো আমরা কেন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকবো? কোনো মানুষই এই যন্ত্রণা বুঝবেন না। এক মাত্র জননেত্রীই অনুভব করেন। কারণ তিনিও ছিলেন সেই সমাবেশে। তিনিও আক্রান্ত হয়েছিলেন এই হামলায়।’

অঝোরে কান্নায় ডুকরে উঠেন রুমা। তিনি বলেন, “মায়ের পেটে পঙ্গু হয়নি। কিন্তু এখন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। যা আমার করার কথা তা আমার বাচ্চারা করে দিচ্ছে। ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি তা বোঝাতে পারবো না। ডাক্তাররা বলেছেন, আমি আর সম্পূর্ণ সুস্থ  হতে পারবো না। বরং ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যাবো।”

২১ আগস্ট এ আমরা যারা আহত হয়ে বেঁচে আছি, এই সরকারের কাছে আমাদের সবার একটাই দাবি, ক্ষমতায় থাকতে যেন আপা (শেখ হাসিনা) দোষীদের বিচার করে যান যারা গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাদের পঙ্গু করে দিয়েছে।

১১ বছর পরেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয় নি? বিচার পাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের আপার উপর ভরসা আছে। বিশ্বাস আছে। ৩৮ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধিদের বিচার হচ্ছে। গ্রেনেড হামলাকারীদেরও বিচার হবে। যে যন্ত্রণা আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি, এই সরকারে থাকতেই আপা বিচার করবেন।

জেইউ/এসকেডি/পিআর