ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বোনাস লাইফ নিয়ে বেঁচে আছি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৫

দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে থেকে আমি প্রায় মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলাম। আমার শরীরে মোট ৫৮টি স্প্রিন্টার। কিডনি একটা ড্যামেজ। ডেঞ্জারাস পয়েন্টের ছয়টি স্প্রিন্টার বিট্রে করলে এক্সিডেন্ট ঘটে যেতে পারে। বলতে পারেন বোনাস লাইভে আছি। মানুষের দোয়ায় বেঁচে আছি।

এভাবেই নিজের স্মৃতিচারণা করছিলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শিকার তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি বজলুর রহমান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শরীরে স্প্রিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে প্রতিটা দিনক্ষণ পার করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজধানীর ১৬/১, শেরে বাংলা রোড মোহাম্মদপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ নিজের বাসায় থাকেন তিনি। পেশায় তিনি একজন ডেভলোপার ব্যবসায়ী। নিজের অবস্থা ও পবিবারের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বজলুর রহমান বলেন, আমার পরিবার চায় না আমি সেই দিনের কথা মনে রাখি। এটা একটা দুঃসহ অবস্থা।

তিনি বলেন, আমার পরিবারের কাছে ২১ আগস্ট একটা ভীতি, একটা শিহরণ। আমি রোগী ছিলাম আর ওরা ছিল ভুগী। ওরা দেখেছে আমার কী হাল ছিল। কথা বলতে বলতে ছলছল করে ওঠে বজলুর রহমানের চোখ। তিনি আরো বলেন, ২১ আগস্ট তারাই করে যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায় না। যারা বাংলাদেশ চায়নি। প্রতিবারই এ ধরনের যতো ঘটনাই ঘটে, একটাই সে শক্তি, তারাই এসব ঘটায়।

তিনি বলেন, নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা করা হয়েছিল। আমার কিডনিতে স্প্রিন্টার ঢুকেছে। আইভী আপার পায়ে। মঞ্চ করা সেই ট্রাকে গ্রেনেড হামলা হলে কেউই হয়তো বাঁচতো না।

man
সে দিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, নেত্রীর বক্তব্য শেষ প্রায়, নেমে আসবেন ঠিক তখনই একটা বিকট আওয়াজ। পরক্ষণে আরো দুটি আওয়াজ। সবাই ছুটোছুটি করছে। আমি হাঁটতে চাই, বাঁচতে চাই, আমিও অন্যদের মতো দৌড়াতে চাই। কিন্তু আমি পারছিলাম না, আমি পড়ে গেলাম। ট্রাকের দিকে তাকিয়ে দেখি ট্রাকটা খালি। তখনই মনে হলো মিটিং আক্রান্ত হয়েছে।

তিনি বলছিলেন, গ্রেনেড হামলার পর মনে হচ্ছিল আমার গায়ে কোনো শক্তি নেই। বাঁচার তাগিদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। হামাগুড়ি দেবো সে জায়গাটিও ছিল না। কিছুদূর যাওয়ার পর আর পারলাম না। মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি।

আমার হাতে অনেক রক্ত। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি। কিছু মানুষ আমাকে একটা পুলিশের গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ আমাকে নেয়নি। পরে এটিএন বাংলার একটি সংবাদ কর্মীদের গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। হাইকোর্ট পর্যন্ত আমার সেন্স ছিল। পরে আমার আর কিছু মনে নেই।

তিনি বলেন, পরে আমি শুনেছি, আমার জামা প্যান্ট রক্তাক্ত। ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে সুচিকিৎসা না হওয়ায় একে একে সমরিতা, মডার্নে নেয়া হয়। কোথাও জায়গা হয়নি আমার। পরে বাংলাদেশ মেডিকেলে জায়গা হলে সমরিতার এক ডাক্তার ঝুঁকি নিয়ে আমার একটা অপারেশন করেছিলেন।

আমার বাঁচার কোনো কথাই ছিল না। পেট ফুলে গিয়েছিল। ২৮ দিন সিসিওতে ছিলাম। সেখান থেকে আমি ভারতের প্যারালাইসিস হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। সেই দিনের সেই ঘটনা, ২১ আগস্টের সেই ঘটনা আমার পরিবার মনে করতে চায় না। আমি যখন আপনাদের কাছে ইন্টারভিউ দেই তখন আমার ফ্যামিলি ঘরে বসে কাঁদে। আমি কৃতজ্ঞ, নেত্রী আমার খোঁজ নিয়েছেন। তিনিও অসুস্থ ছিলেন, কানের চিকিৎসা করিয়েছেন।

এখন শারীরিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে বজলুর রহমান বলেন, এখনো ভাবি আমি কিভাবে বেঁচে আছি। আমার শরীরে এখনো ৫৮টি স্প্রিন্টার। এর মধ্যে ছয়টা স্প্রিন্টার ডেঞ্জারাস পয়েন্টে রয়েছে। কিডনিতে একটা স্প্রিন্টার রয়ে গেছে।

man
চিকিৎসা চলছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাই আসলে আমার চিকিৎসার শেষ নাই। যতো দিন বাঁচবো চিকিৎসা নিয়েই বাঁচতে হবে। বারবার প্যারারাইসিস হসপিটালে যাই। এখন আর ছয় মাস পর পর যেতে পারি না। এক দেড় বছর পর যাই যখন বেশি সমস্যা হয়।

নিজের চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের আর চাওয়ার কিছু নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা সোনার বাংলা গড়ার যে আপ্রাণ চেষ্টা তা যেন সফল হয়, তাই যেন দেখে যেতে পারি।

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে তা কখনো ভাবিনি। আমাদের যা পাওয়ার তা পেয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারে দাবিতে আন্দোলন করেছি। সেই বঙ্গবন্ধুর বিচার যেহেতু হয়েছে তাই আমাদের আর কিছু পাওয়ার নেই।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঠিক প্রক্রিয়ায় বিচার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, মানবতাবিরোধীদের বিচার সবই শেখ হাসিনাকে দেখতে হচ্ছে। অন্য কেউ থাকলে কস্মিনকালেও এগুলোর বিচার হতো না। শেখ হাসিনা যেহেতু এখনো ক্ষমতয়ে তাই আশাবাদী বিচার দেখে যেতে পারবো।

জেইউ/বিএ