কোথায় আছেন মাওলানা তাজউদ্দিন
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি)। হামলার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও মাওলানা তাজউদ্দিন। ঘটনার দিন থেকে পলাতক তিনি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন মাওলানা তাজউদ্দিন।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রেনেড হামলার উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা। ওই হামলায় ইন্ধনদাতা হিসেবে তৎকালীন সরকারের অনেকের মধ্যে উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছিলেন অন্যতম। ধানমন্ডির বাসায় হুজি নেতাদের নিয়ে একাধিক দিন বৈঠক করেছিলেন মাওলানা তাজউদ্দিন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি গ্রেনেড হামলার পলাতক আসামি তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এক উপমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। তার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। মাওলানা তাজউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছ্নে।
কে এই মাওলানা তাজউদ্দিন :
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা তাজউদ্দিন। তৎকালীন জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই তিনি। গ্রেনেড হামলার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে এবং ভাইকে বাঁচাতে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় বিদেশে পাঠিয়ে দেন উপমন্ত্রী পিন্টু।
গ্রেনেড হামার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে সিআইডির হাতের আটক হন পিন্টু। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালতে পিন্টুর দেয়া জবানবন্দি ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, টাংগাইল জেলার গোপালপুর থানার গুলিপেচা গ্রামের মৃত ডা. মহিউদ্দিন মিয়ার ছেলে মাওলানা তাজউদ্দিন।
৮ ভাই ২ বোনের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন সপ্তম। ছোটবেলায় লালবাগ মাদ্রাসায় ও পরে মোহাম্মদপুর শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে তাজউদ্দিন। এরপর পাকিস্তানে চলে যায়। পাকিস্তান থেকে পড়াশুনা শেষ করে ২০০১ সালে দেশে ফিরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি নেন।
২০০১ সালে মোহাম্মদপুরের বছিলাতে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। সূত্র মতে, উপমন্ত্রী হওয়ার পর ধানমন্ডিস্থ ৫/এ পিন্টুর সরকারি বাসায় তাজউদ্দিন মাওলানা তাহের ও ইদ্রিসকে নিয়ে আসতেন। সে সময় পত্রপত্রিকা মারফত জানা যায় মাওলানা তাজউদ্দিন খেলাফত মজলিশের সঙ্গে জড়িত ছিল। মাওলানা তাহের ছিলেন তাজউদ্দিনের সম্পর্কে ভায়রা ভাই।
গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা যায়, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের সঙ্গে পাকিস্তানে পড়াশুনা করেছেন তাজউদ্দিন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসায় যোগাযোগ ছিল তাদের। বাবরের আশির্বাদে মোহাম্মদপুরে বালুর ব্যবসাও করেছেন তাজউদ্দিন।
পিন্টুর জবানবন্দি সূত্রে আরো জানা যায়, ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ৫/৬ দিন পূর্বে ধানমণ্ডির সরকারি বাসভবনে মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা তাহের ও ২/৩ জন বৈঠক করে। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গেও মুফতি হান্নানসহ দেখা করে তাজউদ্দিন। সে সময় ২১ শে আগস্ট আওয়ামী লীগেএর সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল।
বাবর ও ডিজিএফআই রেজ্জাকুল হায়দার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন পিন্টু। গ্রেনেড হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাওলানা তাজউদ্দিনসহ সব হুজি নেতাদের গ্রেফতরে চাপ আসে। তবে সেময় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেননি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও মূল পরিকল্পনাকারীদের রক্ষাহেতু লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে ডিজিএফআই তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় বলে দাবি সিআইডি’র।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানে পড়াশুনা করার সময় মুফতি হান্নানসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাজউদ্দিনের। মুফতি হান্নানের সঙ্গে সেও আফগানিস্তানে ও পাকিস্তান হতে গুপ্ত পথে বাংলাদেশে গ্রেনেড আনেন।
মাওলানা তাজউদ্দিন এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় :
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য ছিল মাওলানা তাজউদ্দিন পাকিস্তানে। তবে সর্বশেষ তিনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল কাহার আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শুনেছিলাম তিনি পাকিস্তানে আছেন। কিন্তু আমার কখনো নিশ্চিত ছিলাম না। তবে সর্বশেষ গত ৫ মাস আগে আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছি তিনি পাকিস্তানে নেই। তিনি আছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়।
তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার ৫২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক আসামি তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টা চলছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাওলানা তাজউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। উপমহাদেশের কোনো রাষ্ট্রে হলে দ্রুত ফিরিয়ে আনা সহজ হতো। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকায়, আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে।
জেইউ/বিএ