মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের ছাত্রত্ব বাতিল করল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
বিজয়ের মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জীবন অনিশ্চয়তায় মধ্যে ফেলে দিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অসুস্থ থাকার কারণে সেমিস্টার ফি দিতে না পারায় তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, গত ১০ মাস ধরে তাকে নানাভাবে হয়রানিও করা হয়েছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক।
ভুক্তভোগী ছাত্রের নাম আবু আমর নাহিল ফারুকী। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অর্নাস ১২ সেমিস্টারের ছাত্র।
লিখিত অভিযোগে নাহিল জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে আমি স্প্রিং সেমিস্টারের কোর্স ফি বাবাদ অর্থ পরিশোধ করতে পানিনি। সুস্থ হওয়ার পর কোর্স ফি জমা দিতে চাইলে আর নেয়া হয়নি। আমার আইডি (বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র) ব্লক করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ-সংক্রান্ত মানবিক আবেদন করা হয়। তবে বিভাগ থেকে প্রশাসনিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহণের সুপারিশ করলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা করা হয়নি। বিষয়টি সমাধানে কর্মকর্তাদের বারবার বলা হলেও কেউ আমলে নেয়নি। উল্টো আমাদের (ছাত্র ও তার মা) বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের কথা বলার সময় নেই।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসেল নামে এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ভুক্তভোগী ছাত্র নাহিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করলে আমাকে বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু কেউ আমাকে সহযোগিতা তো করেই নি, উল্টো নানা রকম লজ্জাকর মন্তব্য করেছেন। পরে আমার মা বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকেও হয়রানি করা হয়।’
ভুক্তভোগীর মা মোছা. মাহফুজা ফারুকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। তবে এখনও বিষয়টি সমাধান করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছেন। বর্তমানে আমার উপার্জন দিয়ে পরিবার চলে। আইন অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার সন্তানকে বিনাবেতনে পড়ালেখার সুযোগ দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র এক সেমিস্টার কোর্স ফি দিতে না পারায় আমার ছেলের জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। তার আইডি ব্লক করে দেয়ায় বর্তমানে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ওয়েভার (বৃত্তি) সুবিধা দেয়ার বিধান রয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোর্স ফি দিতে না পারায় কেন তার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুর ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খবর নিচ্ছি, তার বিষয়টি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করা হবে।’
এমএইচএম/এসআর/পিআর