ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শীতের শুরুতে বেড়েছে মশার উৎপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান রনির ৬ বছর বয়সী মেয়ে সাবিহা রহমান। বাবা-মায়ের কাছে সে প্রায়ই জানতে চায়-এত মশা কেন? মশার কয়েল, মশা মারার ব্যাট-কোনো কিছু দিয়েই নাকি মশানিধন সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিশুটির বাবা সাদিকুর রহমান রনিও। মিরপুরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছোট্ট মেয়ে মশার জ্বালায় বিরক্ত হয়ে একটু পরপরই বলে ওঠে ‘উফ! বাবা, এত্ত মশা কেন’?

রাজধানীতে মশার জ্বালা নিয়ে এ অভিযোগ শুধু রনির নয়, রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষের কাছে এ সমস্যা নিয়ে অভিযোগ নিত্যদিনের। শীত মৌসুমে মশার উপদ্রব আরও বেড়ে যায়। তাই শীতের শুরুতেই এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। রাজধানীতে শীতের শুরুতে মশার উপদ্রব আরও বেড়েছে।

মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সম্প্রতি বিশেষ কর্মসূচি নিলেও রাজধানীতে মশার উপদ্রব কমেনি। উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সর্বত্রই একই অবস্থা। দিনে-রাতে সবসময় মশার অত্যাচার চলছেই।

মশা নিয়ন্ত্রণে গত ২ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ফলাফল শূন্য। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিয়মিত মশানিধনে ফগিং ও স্প্রে কার্যক্রম চলছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবুও রাজধানীতে কমছে না মশার উপদ্রব।

অথচ প্রতিবছর মশানিধন কার্যক্রমে দুই সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বাড়ছেই। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে দুই সিটি মিলিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। তারপরও মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের কার্যকারী ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজধানীবাসী।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় অংশের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশকনিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশকনিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

গত ২ ডিসেম্বর ডিএসসিসির পক্ষ থেকে মশক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গৃহীত স্পেশ্যাল ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সে সময় জানানো হয়, কর্পোরেশনের ৫টি অঞ্চলেই একযোগে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩৬৭ জন মশকনিধন কর্মী কাজ করবেন। এ কাজে ৩২৪টি হস্তচালিত মেশিন, ২৪৭টি ফগার মেশিন এবং ২০টি হুইল ব্যারো মেশিন ব্যবহার করা হবে।

সে সময় সাঈদ খোকন বলেন, ‘এবার আগাম বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে মশার উপদ্রবও বেড়েছে। আমরা একাধিকবার ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নেয়ার কারণে এই মশার ঝুঁকি থেকে বের হয়ে এসেছি অনেকটা। আমরা সর্বোচ্চ জনবল দিয়ে এমন সমস্যা সমাধানে সফল হতে চেষ্টা করছি। মশানিধনে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যদি কোনো এলাকায় কর্মচারীরা অনুপস্থিত থাকে তাহলে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে অবহিত করলে অনুমতিসাপেক্ষে বাসায় গিয়ে মশার ওষুধ স্প্রে করতে বাধ্য থাকবে।’

অন্যদিক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশকনিধন বিষয়টি শুধু তারা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করে। মশার ওষুধ এখন কাউন্সিলরদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। তাই বিষয়টি এখন পুরাটাই কাউন্সিলরদের দায়িত্বে। তবে সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তারা খুব শিগগিরই বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেবেন।

মশকনিধন বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাহ সিংহ বলেন, ‘বর্তমানে মশানিধনের জন্য জনবল, ওষুধ, মেশিনসহ কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আমরা শুধু মনিটরিং করি।’

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেন অর্ক মশার অত্যাচার বিষয়ে বলেন, ‘দিন-রাত নেই, মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে প্রায় সময়ই হয় মশারি না হয় কয়েল ব্যবহার করতে হয়। সন্ধ্যায় মশার উৎপাত আরও বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘শুধু পত্রিকা-টিভিতেই দেখি মশা নিধনের জন্য বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব মশকনিধন কর্মীদের দেখা পাই না।’

একই রকম অভিযোগ মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা আহমেদ নূরের। তিনি বলেন, ‘মশার কামড়ে অতিষ্ঠ-বিরক্ত আমরা। ইদানিং মশার অত্যাচার আরও বেড়েছে। কয়েল, মশারি ব্যবহার করেও মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না অনেক সময়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে মশকনিধন কর্মীদের মশার ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গেলেও মশা মরে না।’

এএস/এসআর/পিআর

আরও পড়ুন