মাইক ব্যবসায়ীদের আফসোস
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট আগামী ৩০ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আজ সোমবার। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু হয়েছে। দলগুলো নির্বাচনী প্রচারণায় মাইক ভাড়া নিয়ে থাকে। তবে অতীতের মতো এবার এই মাইক ভাড়া কম হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
তারা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোয এমন সময় আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যেত। মাইক ভাড়ার অগ্রিম অর্ডার আসতো। এবার এখনও যেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দেখা যাক সামনের দিনগুলোতে কী হয়?
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরনো ঢাকার ৪০ নম্বর উর্দু রোডের দোকানে কথা হয় একসময়ের খ্যাতনামা মাইক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘রহমত’ মাইকের কর্ণধার মফিজউল্ল্যাহ বাবুর সঙ্গে। তিনি আফসোসের সুরে ব্যবসায়িক দুরবস্থার কথা জানাচ্ছিলেন।
বলছিলেন, ‘নারে ভাই, আমাগো ব্যবসা এখন তলানিতে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হইলে কী হইবো, আমাগো লাভ নাই। খুব বড়জোর দৈনিক ৫০০ টাকা চুক্তিতে মাইক ভাড়া যাইবো। ৫০০ টাকার মধ্যে ১৫০ টাকা ব্যাটারি খরচ আছে। অথচ ৮০-৯০ এর দশকে মাইক ভাড়ার জন্য কাস্টমারের লম্বা লাইন পড়তো। একটা অনুষ্ঠান শেষ করে মাইক খোলারও সময় পেতাম না। বিএনপির প্রার্থী ২০টি মাইক ভাড়া করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভাড়া করতো ২৫টি মাইক। আহারে কই গেলো সেই দিনগুলো?
দেখা গেল, দোকান মালিক মধ্যবয়সী এই বাবু দোকানে বসে একটি যন্ত্রাংশ ঝালাইয়ের কাজ করছেন। পাশেই টুলে বসে ঝিমুচ্ছে ১২-১৩ বছরের এক কিশোর। বাবু যে টেবিলে বসেছিলেন ঠিক তার পেছনে মাথার ওপরে রহমত মাইক মুখে বক্তৃতারত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ছবি ঝুলানো। বহু বছরের পুরনো এ ছবিগুলোয় ধুলোর স্তর জমেছে। দোকানের সামনে রাখা দুটি মাইকের বাক্স ও বিভিন্ন থাকে থাকা ছোট বড় কয়েকটি মাইক ও যন্ত্রাংশে জং ধরা।
মফিজউল্ল্যাহ বাবু বলছিলেন, বাংলাদেশে মাইক ব্যবসার জগতে পথিকৃত ছিলেন তার বাবা হাজী. মো নাসির উল্ল্যাহ। পঞ্চাশোর্ধ্ব বাবু তার বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকে মাইকের রমরমা ব্যবসা ও ক্রমান্বয়ে ব্যবসার ভাটা দেখেছেন। তার দাবি, তাদের দোকানে চাকরি করে পরবর্তীতে তাহের ও কলরেডিসহ অন্যান্য মাইকের দোকান হয়।
তিনি বলেন, একসময় দম ফেলার ফুসরত পেতাম না। প্রায় বছরজুড়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ, যাত্রাপালা, মেলা, ওয়াজ মাহফিল লেগেই থাকতো। তখন গ্রামে-গঞ্জে যাত্রাপালায় মাইক ভাড়া করা হতো। জেনারেটর ও মাইক কাঁধে করে নিয়ে যেতাম। নবাব সিরাজউদ্দৌলা খ্যাত আনোয়ার হোসেন ও কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদসহ অনেককেই আয়োজকরা সেসব অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। কথা দিয়েও চাহিদার তুলনায় মাইকের সংখ্যা কম থাকায় কাস্টমাররা রাগ পর্যন্ত করতো।
বাবু জানান, তখন সরকার ও বিরোধী দলের সমাবেশগুলো মাইক ছাড়া জমতো না। আওয়ামী লীগের মিটিং কলরেডি, বিএনপি তাহের ও জাতীয় পার্টি রহমত মাইকে কভার হতো। কিন্তু এখন সেই শক্তিশালী বিরোধী দলও নেই, মাইকের প্রচলনও নেই। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় সের দরে বহু মাইক ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। মাইক ব্যবসা আগের তুলনায় নেই বললেই চলে।
এমইউ/জেডএ/আরআইপি