তাবলীগে বিভাজন মেনেই ৯ দফা দাবি সাদপন্থীদের
টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রতিবাদ জানিয়েছে তাবলীগ জামাতের একাংশ। সাদপন্থী অংশটি বলছে, প্রকৃত ঘটনা লুকিয়ে মূলধারা থেকে বিচ্যুতরাই তাবলীগের ঐতিহ্য ও পুরনো প্রথা ভেঙে বিভাজন তৈরি করেছে। তাবলীগে বিভাজন মেনেই ৯ দাবিও উত্থাপন করেছেন সাদপন্থীরা।
সোমবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা চাওয়া উত্থাপন করেন সাদপন্থী অংশটি।
‘১ ডিসেম্বর টঙ্গীর ময়দানে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের সাদপন্থীরা।
সাদপন্থী তাবলীগের অংশটির মুরব্বি মাওলানা খালিদ ইকবাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা মিডিয়ার মাধ্যমে উঠে এসেছে। সেখানে (টঙ্গীতে) কে বা কারা কাদের উপর হামলা করেছিল। আমরা সেটা চাইনি। তবুও সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা শিশু, অল্পবয়স্ক ও মাদরাসা ছাত্রদের নিরাপদে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি।
ঘটনার পরও বিভিন্ন স্থানে আলেম ও তাদের স্ত্রী পরিজনদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে ঘৃণ্য ঘটনা হচ্ছে টঙ্গীর সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন মাওলানা আব্দুল ওহাব। মামলায় আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি ঘটনার সময় দেশেই ছিলেন না, ছিলেন ভারতে। এটার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তাদের উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী।
বিদেশি মেহমানদের হেনস্তা, পাসপোর্ট আটকে রেখে দেশে ফিরতে বাধা দেয়া, মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার চেষ্টা চলে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বী মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল একটি অংশ দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাবলীগ জামাতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ গোটা জামাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। অরাজনৈতিক এ দ্বীনি মেহনতকে তারা রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছে। মুরুব্বিদের বাইরে রেখে দুই মাস ধরে পেশীশক্তির বলে টঙ্গী ইজমেতা ময়দান দখলের চেষ্টায় ছিল তারাই।
তাবলীগে বিভাজন ছিল না। কিন্তু এখন কেন বিভাজন হলো? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কারো মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। মনগড়া ও বানোয়াট কথা বলে তারাই বিভাজন তৈরি করেছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করেছি তাবলীগে যেন বিভাজন না থাকে। কিন্তু তারা আমাদের সাথে বসতেই রাজি হননি। এরপর আমরা অত্যন্ত সমান দূরত্বে কিংবা সমান সুযোগ নিয়ে পাশাপাশি থেকেই নিজেরা নিজেদের মতো করে যেন তাবলীগের মেহনত করতে পারি সে চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে শতভাগ সহযোগিতা মিলছে না।
তাবলীগের এই বিভাজন সহসা কাটছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে বিভাজন তৈরি হয়েছে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আস্তে আস্তে এটা হয়েছে। বিভাজন নিয়েই তাবলীগী কার্যক্রম চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাদপন্থীদের উত্থাপিত ৯ দফা দাবি
১) গত ১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলীগের উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে নেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টঙ্গী মাঠের পুরো নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নিতে হবে।
২) নির্বাচনের পর উভয়পক্ষের সাথে পরামর্শ করে টঙ্গী মাঠ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৩) একইভাবে কাকরাইল মসজিদে পক্ষদ্বয়ের অবস্থান ও ব্যবহার সমতাভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।
৪) একপক্ষ কাকরাইলে থাকলে অন্যপক্ষকে টঙ্গীর ময়দান পরিচালনার ও ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে।
৫) বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন মসজিদে বা এলাকায় একপক্ষ অন্যপক্ষকে তাবলীগের কাজে বাধা দিতে পারবে না। বাধা দিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
৬) মাদরাসা ছাত্রদেরকে তাবলীগের কাজে বাধা দেয়া বা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা যাবে না।
৭) দারুল উলুম দেওবন্দ অধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাসেম নোমানী এবং শিক্ষক ও পরিচালক হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী উভয়ই বলেছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ তাবলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো পক্ষে কথা বলবে না। আমরা চাই; আমাদের উলামায়ে কেরামগণও কথায় ও কাজে দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।
৮) বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং
৯) আমরা আগের মতোই বাংলাদেশে রাজনীতিমুক্ত তাবলীগ চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বি মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর, মাওলানা সাইফুল্লাহ ও আকরাম।
জেইউ/এসএইচএস/পিআর