দুর্নীতিই সকল উন্নয়নের প্রতিবন্ধক : দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সকল প্রকার উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে দুর্নীতি। একইসঙ্গে দুর্নীতি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ২ থেকে ৩ শতাংশ গ্রাস করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে রোববার দুদক মিডিয়া সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আসুন, জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই’।
রোববার সকাল নয়টায় দুদকের সামনের সড়কে শান্তির প্রতীক পায়রা ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এ সময় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং এ এফ এম আমিনুল ইসলামসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে কমিশনের চেয়াম্যান ইকবাল মাহমুদ দুই কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং কমিশনের পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনের পরপরই কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে রক্ষিত রেজিস্টারে নিজ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং পোস্টার ও কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান। রেজিস্টারটি ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বসাধারণের স্বাক্ষরের জন্য দুদক মিডিয়া সেন্টারে উন্মুক্ত রাখা হবে। দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর রেজিস্টারে স্বাক্ষর প্রদান করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজ নিজ দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরার জন্য মহানগরীর নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুর্নীতি কোনো রাষ্ট্রের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির প্রকোপের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন এবং কাঙিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। তাই সারাবিশ্বে জাতিসংঘের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে।’
শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয় জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। তাই সকল পেশাজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ তরুণ এবং প্রবীণ প্রজন্মের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করতে চায় দুদক।
দেশের উন্নয়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা সর্বোপরি এদেশের মানুষের কল্যাণে দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং তাদের সমর্থনেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অবশ্যই দুর্নীতি কমে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের দিনে আমাদের সকলের অঙ্গীকার হোক-নিজে কোনো অন্যায় করব না, অন্যকে অন্যায় করতে দেব না। নিজে ঘুষ খাব না, অন্যকে ঘুষ খেতে দেব না।’
উদ্বোধনের পর দুদক চেয়ারম্যান কমিশনের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দুদকের প্যানেল আইনজীবী, ঢাকা মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, গার্ল গাইডস, বয়েজ স্কাউট, আনসার, বিএনসিসি, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ নগরীর সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন করেন।
মানবন্ধন শেষে বেলা ১১টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণে জাতির আগামী প্রজন্মকে সম্পৃক্তকরণে দুদকের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। দুর্নীতি আমাদের একটি জাতীয় ব্যাধি। এটি সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে ও সুষম রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাহত করে। তাই জাতীয় এই সমস্যা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে দুদককে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে পারি, তবে এর সুফল দেশের প্রতিটি নাগরিক ভোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে অতিথিরা দুর্নীতিবিরোধী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এমইউ/এসআর/জেআইএম