ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শিক্ষিকা হাসনার মুক্তি চায় ৫ বছরের শিশু মেঘলাও

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮

অরিত্রি অধিকারীকে হত্যায় প্ররোচনার দায়ে গ্রেফতার হওয়া শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে এবার আন্দোলনে নেমেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অভিভাবকরাও রয়েছেন। শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেছে। ‘আমার মা নির্দোষ, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’ শ্লোগানে মুখরিত বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাসের গেটের সামনের জায়গা।

এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে পাঁচ বছরের শিশু মেঘলা। যদিও কেন এ আন্দোলন বা কার জন্য তা না বুঝলেও রাস্তায় বসে ‘আমার মায়ের মুক্তি চাই’, ‘আমার মায়ের অপমান মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দিচ্ছে সে।

আন্দোলনে কেন এসেছ? জানতে চাইলে পাঁচ বছরের মেঘলা বলে, ‘মায়ের (শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করছেন শিক্ষার্থীরা) মুক্তির দাবিতে আপুর সঙ্গে এসেছি।’ পাশেই বসা তার বড় বোন রোদেলা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

রোদেলা জানায়, হাসনা হেনা ম্যাম মায়ের মতো। তিনি তার ক্লাস শিক্ষক। বড় আপুদের পাশাপাশি সেও শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তি চাই।

সে বলে, ‘আমার ছোট বোন মেঘলা এবার এই স্কুলে প্রভাতী শাখায় প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাই ওকে নিয়ে এসেছি।’

শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগান লিখে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে তারা গ্রেফতার শিক্ষিকার মুক্তির দাবি জানান।

তাদের অভিযোগ, যারা অপরাধী তাদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। অথচ এ ঘটনায় সম্পূর্ণ নিদোর্ষ হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই তাকে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, শিক্ষিকা হাসনা হেনা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানর একজন ভালো শিক্ষক। তিনি শিক্ষার্থীদের মায়ের মতো আদর যত্ন করেন ও পড়াশোনা করান। অরিত্রি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে অরিত্রির হত্যাকাণ্ডের প্ররোচনা দানকারী হিসেবে হাসনা হেনাসহ অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। ভিকটিমের বাবাও এই তিনজনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় হাসনা হেনাকে পুলিশ আটক করেছে। তার মুক্তির জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন। শিক্ষকরাই এসব ছাত্রীদের রাস্তায় নামার পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বেইলি রোডের যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে বেইল রোডের আশপাশে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।

ডিবি পূর্ব বিভাগের (মতিঝিল) সহকারী কমিশনার আতিকের নেতৃত্বে ওই শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।

সহকারী কমিশনার আতিক জানান, শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আখতার ও প্রভাতী শাখার শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা।

এমএইচএম/এসআর/পিআর

আরও পড়ুন