এবার আটক শিক্ষিকার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় ভিকারুননিসার ছাত্রীরা
অরিত্রী অধিকারীকে হত্যায় প্ররোচনার দায়ে গ্রেফতার হওয়া শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে মুক্তির দাবিতে এবার আন্দোলনে বসেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকদের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাসের গেটের সামনে বসে ‘আমার মা নির্দোষ, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’ বলে বিক্ষোভ করছে তারা।
শিক্ষার্থীদের শ্লোগানের মধ্যে রয়েছে ‘অরিত্রী আমার বোন, হাসনা হেনা আমার মা’, ‘যাদের হাতে মানুষ গড়া তাদের কেন হাতকড়া?’, ‘আমরা কি শিক্ষকের হাতে হাতকড়া পরিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচিত করছি না?’, ‘শিক্ষকের অপমান মানি না, মানব না’, ‘বিচার চাই, অবিচার না’, ‘বিচার চাইতে গিয়ে এ কোন অবিচার’ ইত্যাদি।
শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। তবে অরিত্রীর হত্যাকাণ্ডের বিচারে ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
শিক্ষক মুক্তির আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশের ছাত্রী ফরিয়া লামিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসনা হেনা ম্যাডাম সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাকে বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। অচিরেই তাকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা তার মুক্তি চাই।’
শিক্ষার্থীদের দাবি, অরিত্রীর মুত্যুর জন্য দায়ী অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক। অথচ তাদেরকে বাদ দিয়ে মায়ের মতো শিক্ষিকা হাসনা হেনা গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের গ্রেফতার করা হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষিকা হাসনা হেনার মুক্তির জন্য তারা আইনি প্রক্রিয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। তাই যতক্ষণ না তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। পাশাপাশি তার মুক্তির দাবিতে আগামী রোববার (৯ ডিসেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল।
ডিবি পূর্ব বিভাগের (মতিঝিল) সহকারী কমিশনার আতিকের নেতৃত্বে ওই শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার আতিক জানান, শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আখতার ও প্রভাতী শাখার শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা।
এ ঘটনায় ভিকারুননিসার শিক্ষক আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান এবং গভর্নিং বডির সদস্য ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি।
মঙ্গলবার দুপুরে অরিত্রি কেন আত্মহত্যা করেছে এর কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী এবং বিচারক রাখার কথা বলা হয়। তারা অরিত্রি আত্মহত্যার ঘটনা এবং সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম ঘটনা তদন্ত করে কারা দায়ী এগুলো খুঁজে বের করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেবেন।
এমএইচএম/এসআর/পিআর